পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

, . . . বিশ্বপরিচয় । ৩৭৫ ৷ একদিন মাহুৰ ঠিক করেছিল বিশ্বমণ্ডলের কেন্দ্রে পৃথিবীর আসন অবিচলিত,তাকে প্রদক্ষিণ করছে স্বৰ্ষনক্ষত্র। মনে যে করেছিল, সে জন্তে তাকে দোষ দেওয়া যায় ন— সে দেখেছিল পৃথিবী-দেখা সহজ চোখে । আজ তার চোখ বেড়ে গেছে, বিশ্ব-দেখা চোখ বানিয়ে নিয়েছে। ধরে নিতে হয়েছে পুথিবীকেই ছুটতে হয় স্বর্ষের চার দিকে, দরবেশি নাচের মতো পাক খেতে খেতে। পথ মুদীর্ঘ, লাগে ৩৬৫ দিনের কিছু বেশি। এর চেয়ে বড়ো পথওয়াল গ্রহ আছে, তার ঘুরতে এত বেশি সময় নেয় যে ততদিন বেঁচে থাকতে গেলে মানুষের পরমায়ুর বহর বাড়াতে হবে। . রাত্রের আকাশে মাঝে মাঝে নক্ষত্রপুঞ্জের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় লেপে দেওয়া আলো। তাদের নাম দেওয়া হয়েছে নীহারিক। এদের মধ্যে কতকগুলি স্থদুরবিস্তৃত অতি হালকা গ্যাসের মেঘ, আবার কতকগুলি নক্ষত্রের সমাবেশ । দুরবীনে এবং ক্যামেরার যোগে জানা গেছে যে, যে-ভিড় নিয়ে এই শেষোক্ত নীহারিকা, তাতে যত নক্ষত্র জমা হয়েছে, বহু কোটি তার সংখ্যা, অদ্ভূত দ্রুত তাদের গতি। এই যে নক্ষত্রের ভিড় নীহারিকামণ্ডলে অতি দ্রুতবেগে ছুটছে, এরা পরস্পর ধাক্কা লেগে চুরমার হয়ে যায় না কেন। উত্তর দিতে গিয়ে চৈতন্য হল এই নক্ষত্রপুঞ্জকে ভিড় বল ভুল হয়েছে। এদের মধ্যে গলাগলি ঘেষাঘেষি একেবারেই নেই। পরস্পরের কাছ থেকে অত্যন্তই দূরে দূরে এর চলাফের করছে। পরমাণুর অন্তর্গত ইলেকট্রনদের গতিপথের দূরত্ব সম্বন্ধে স্তর জেম্স্ জীন যে উপমা দিয়েছেন এই নক্ষত্রমণ্ডলীর সম্বন্ধেও অনুরূপ উপমাই তিনি প্রয়োগ করেছেন। লওনে ওয়াটলু নামে এক মস্ত স্টেশন আছে। যতদূর মনে পড়ে সেটা হাওড়া স্টেশনের চেয়ে বড়োই। স্তর জেমস্ত জীন বলেন সেই স্টেশন থেকে আর-সব খালি করে ফেলে কেবল ছ'টি মাত্র ধুলোর কণা যদি ছড়িয়ে দেওয়া যায় তবে আকাশে নক্ষত্রদের পরস্পর দূরত্ব এই ধূলিকণাদের বিচ্ছেদের সঙ্গে কিছু পরিমাণে তুলনীয় হতে পারবে। তিনি বলেন, নক্ষত্রের সংখ্যা ও আয়তন যতই হোক আকাশের অচিন্তনীয় শূন্ততার সঙ্গে তার তুলনাই হতে পারে না। বিজ্ঞানীরা অকুমান করেন, স্বষ্টিতে রূপবৈচিত্র্যের পালা আরম্ভ হবার অনেক আগে বেল ছিল একটা পরিব্যাপ্ত জলন্ত বাষ্প। গরম জিনিস মাত্রেরই ধর্ম এই যে ক্রমে ক্রমে সে তাপ ছড়াতে থাকে। ফুটন্ত জল প্রথমে বাষ্প হয়ে বেরিয়ে আসে। ঠাণ্ড হতে হতে সেই বাপ জমে হয় জলের কণা। অত্যন্ত তাপ দিলে কঠিন পদার্থও ক্রমে স্বায় গ্যাস হয়ে ; সেই রকম তাপের অবস্থায় বিশ্বের হালকা ভারি সব জিনিসই ছিল গ্যাস । কোটি কোটি বছর ধরে কালে কালে তা ঠাণ্ড হচ্ছে। তাপ কমতে কমতে গ্যাস থেকে ছোটাে ছোটাে টুকরো ঘন হয়ে ভেঙে পড়েছে। এই বিপুলসংখ্যক কণা