পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বপরিচয় । н لايق পর্যন্ত এই টানের সঙ্গে মানুষকে লড়াই করে চলতে হয়েছে। অনেক আগেই সে আকাশে উড়তে পারত কিন্তু পৃথিবী কিছুতেই তাকে মাটি ছাড়তে দিতে চায় না। এই চব্বিশঘন্ট টানের থেকে নিজেকে ছিনিয়ে নেবার জন্যে মানুষ কল বানিয়েছে বিস্তর— এতে পৃথিবীকে কিছু ফাকি দেওয়া চলে— সম্পূর্ণ না । কিন্তু এই টানকে নমস্কার করি যখন জানি, পৃথিবী হঠাৎ যদি তার টান আলগা করে তা হলে যে ভীষণ বেগে পৃথিবী পাক খাচ্ছে তাতে আমরা তার পিঠের উপর থেকে কোথায় ছিটকে পড়ি তার ঠিকানা থাকে না। বস্তুত পৃথিবীর টানটা এমন ঠিক মাপে হয়েছে যাতে আমরা চলতে পারি অথচ পৃথিবী ছাড়তে পারি নে। । বিপরীতধর্মী বৈদ্যুতকণার যুগলমিলনে যে স্বষ্টি হল সেই জগৎটার মধ্যে সর্বব্যাপী দুই বিরুদ্ধ শক্তির ক্রিয়া, চলা আর টান, মুক্তি আর বন্ধন। একদিকে ব্ৰহ্মাগুজোড় মহা দৌড় আর-একদিকে ব্রহ্মাওজোড়া মহা টান। সবই চলছে আর সবই টানছে । । চলাটা কী আর কোথা থেকে তাও জানি নে। আর টানটা কী আর কোথা থেকে তাও জানি নে। আজকের বিজ্ঞানে বস্তুর বস্তুত্ব এসেছে অত্যন্ত সূক্ষ্ম হয়ে, সব চেয়ে প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে চল! আর টান । চল যদি একা থাকত তা হলে চলন হত একেবারে সিধে রাস্তায় অন্তহীনে। টানা তাকে ফিরিয়ে ফিরিয়ে আনছে অস্তবানে, ঘোরাচ্ছে চক্রপথে। স্বর্য এবং গ্রহের মধ্যে আছে বহুলক্ষ মাইল ফণক, সেই দূরত্বের শূন্ত পার হয়ে নিরস্তর চলেছে অশরীর টানের শক্তি, অদৃশু লাগামে বেঁধে গ্রহগুলোকে ঘোরাচ্ছে সার্কাসের ঘোড়ার মতো। এদিকে স্বৰ্যও ঘুরছে বহুকোটি ঘূর্ণ্যমান নক্ষত্রেতৈরি এক মহা জ্যোতিশক্রের টানে। বিশ্বের অণীয়সী গতিশক্তির দিকে তাকাও সেখানেও বিরাট চলা টানার একই ছন্দের লীলা। স্বৰ্ষ আর গ্রহের মাঝখানের যে দূরত্ব, তুলনা করলে দেখা যাবে অতিপরমাণু জগতে প্রোটন ইলেকট্রনের মধ্যেকার দুরত্ব কম-বেশি সেই পরিমাণে। টানের জোর সেই শূন্তকে পেরিয়ে নিত্যকাল বাধা পথে ঘোরাচ্ছে ইলেকট্রনের দলকে । গতি আর সংযমের অসীম সামঞ্জস্য নিয়ে সব-কিছু। এইখানে বলে রাখা দরকার, ইলেকট্রন প্রোটনের টানাটানি মহাকর্ষের নয়, সেটা বৈদ্যুত টানের। পরমাণুদের অন্তরের টানটা বৈদ্যুতের টান, বাহিরের টানটা মহাকর্ষের, যেমন মানুষের ঘরের টানটা আত্মীয়তার, বাইরের টানটা সমাজের । মহাকর্ষ সম্বন্ধে এই যে মতের আলোচন কুর গেল ফুটনের সময় থেকে এটা চলে আসছে। এর থেকে আমাদের মনে এই একটা ধারণা জন্মে গেছে যে, দুই বস্তুর মাঝখানের অবকাশের ভিতর দিয়ে একটা অমৃত শক্তি টানাটনি করছে। কিন্তু এই ছবিট। মনে আনবার কিছু বাধা আছে। মহাকর্ষের ক্রিয় একটুও সময়