পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুচনা নদীর প্রবাহের এক ধারে সামান্ত একটা ভাঙা ডাল আটকা পড়েছিল। সেইটেতে ঘোলা জল থেকে পলি ছেকে নিতে লাগল। সেইখানে ক্রমে একটা দ্বীপ জমিয়ে তুললে। ভেসে-আসা নানা-কিছু অবাস্তর জিনিস দল বঁধিল সেখানে, শৈবাল ঘন হয়ে সেখানে ঠেকল এসে, মাছ পেল আশ্রয়, এক পায়ে বক রইল দাড়িয়ে শিকারের লোভে, খানিকটুকু সীমানা নিয়ে একটা অভাবিত দৃশ্ব জেগে উঠল— তার সঙ্গে চার দিকের বিশেষ মিল নেই। চৈতালি তেমনি এক-টুকরো কাব্য যা অপ্রত্যাশিত। স্রোত চলছিল যে রূপ নিয়ে অল্প-কিছু বাইরের জিনিসের সঞ্চয় জমে ক্ষণকালের জন্যে তার মধ্যে আকস্মিকের আবির্ভাব হল । পতিসরের নাগর নদী নিতান্তই গ্রাম্য । অল্প তার পরিসর, মন্থর তার স্রোত। তার এক তীরে দরিদ্র লোকালয়, গোয়ালঘর, ধানের মরাই, বিচালির স্ত,প, অন্য তীরে বিস্তীর্ণ ফসল-কাটা শস্তখেত ধুধু করছে। কোনো-এক গ্রীষ্মকাল এইখানে আমি বোট বেঁধে কাটিয়েছি। দুঃসহ গরম । মন দিয়ে বই পড়বার মত অবস্থা নয়। বোটের জানলা বন্ধ করে খড়খড়ি খুলে সেই ফঁাকে দেখছি বাইরের দিকে চেয়ে । মনটা আছে ক্যামেরার চোখ নিয়ে, ছোটো ছোটো ছবির ছায়া ছাপ দিচ্ছে অস্তরে । অল্প পরিধির মধ্যে দেখছি বলেই এত স্পষ্ট করে দেখছি। সেই স্পষ্ট দেখার স্মৃতিকে ভরে রাখছিলুম নিরলংকৃত ভাষায় । অলংকারপ্রয়োগের চেষ্টা জাগে মনে যখন প্রত্যক্ষবোধের স্পষ্টতা সম্বন্ধে সংশয় থাকে। যেটা দেখছি মন যখন বলে ‘এটাই যথেষ্ট তখন তার উপরে রঙ লাগাবার ইচ্ছাই থাকে না । চৈতালির ভাষা এত সহজ হয়েছে এইজন্যেই । এর প্রথম কয়েকটি কবিতায় পূর্বতন কাব্যের ধারা চলে এসেছে। অর্থাৎ সেগুলি যাকে বলে লিরিক । আমার অল্প বয়সের লেখাগুলিকে এক দিন ছবি ও গান এই দুই শ্রেণীতে ভাগ করেছিলেম। তখন আমার মনে ছিল আমার কবিতার সহজ প্রবৃত্তিই ঐ ছুটি শাখায় নিজেকে প্রকাশ করা। বাইরে আমার