পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাহিনী কহিলেন শির নাড়ি ভাবোন্মত্ত মহামুনিবর, “দেবতার সামগীতি গাহিতেছে বিশ্বচরাচর, ভাষাশুন্ত, অর্থহারা। বহ্নি উর্ধ্বে মেলিয়া অঙ্গুলি ইঙ্গিতে করিছে স্তব ; সমুদ্র তরঙ্গবাহু তুলি কী কহিছে স্বর্গ জানে ; অরণ্য উঠায়ে লক্ষ শাখা মর্মরিছে মহামন্ত্র ; ঝটিকা উড়ায়ে রুদ্র পাখা গাহিছে গর্জনগান ; নক্ষত্রের অক্ষৌহিণী হতে অরণ্যের পতঙ্গ অবধি, মিলাইছে এক স্রোতে সংগীতের তরঙ্গিণী বৈকুণ্ঠের শাস্তিসিন্ধুপারে। মাহুষের ভাষাটুকু অর্থ দিয়ে বদ্ধ চারি ধারে, ঘুরে মানুষের চতুর্দিকে। অবিরত রাত্রিদিন মানবের প্রয়োজনে প্রাণ তার হয়ে আসে ক্ষীণ । পরিস্ফুট তত্ত্ব তার সীমা দেয় ভাবের চরণে ; ধূলি ছাড়ি একেবারে উর্ধ্বমুখে অনন্ত গগনে উড়িতে সে নাহি পারে সংগীতের মতন স্বাধীন মেলি দিয়া সপ্তস্থর সপ্তপক্ষ অর্থভারহীন । প্রভাতের শুভ্ৰ ভাষা বাক্যহীন প্রত্যক্ষ কিরণ জগতের মর্মদ্বার মুহূর্তেকে করি উদঘাটন নির্বারিত করি দেয় ত্রিলোকের গীতের ভাণ্ডার ; যামিনীর শাস্তিবাণী ক্ষণমাত্রে অনন্ত সংসার আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে, বাক্যহীন পরম নিষেধ বিশ্বকর্ম-কোলাহল মন্ত্রবলে করি দিয়া ভেদ নিমেষে নিবায়ে দেয় সর্ব খেদ সকল প্রয়াস, জীবলোক-মাঝে আনে মরণের বিপুল আভাস ; নক্ষত্রের ধ্রুব ভাষা অনির্বাণ অনলের কণা জ্যোতিষ্কের সুচীপত্রে আপনার করিছে সুচনা নিত্যকাল মহাকাশে ; দক্ষিণের সমীরের ভাষা কেবল নিশ্বাসমাত্রে নিকুঞ্জে জাগায় নব আশা, দুর্গম পল্লবদুর্গে অরণ্যের ঘন অন্তঃপুরে নিমেষে প্রবেশ করে, নিয়ে যায় দূর হতে দূরে >@