পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি রমেশ এবার আইন-পরীক্ষায় যে পাশ হইবে, সে সম্বন্ধে কাহারও কোনো সন্দেহ ছিল না । বিশ্ববিদ্যালয়ের সরস্বতী বরাবর তাহার স্বর্ণপদ্মের পাপড়ি খসাইয়া রমেশকে মেডেল দিয়া আসিয়াছেন— স্কলারশিপও কখনো র্যাক যায় নাই । পরীক্ষা শেষ করিয়া এখন তাহার বাড়ি যাইবার কথা। কিন্তু এখনো তাহার তোরঙ্গ সাজাইবার কোনো উৎসাহ দেখা যায় নাই । পিতা শীঘ্র বাড়ি আসিবার জন্য পত্র লিথিয়াছেন। রমেশ উত্তরে লিথিয়াছে, পরীক্ষার ফল বাহির হইলেই সে বাড়ি যাইবে । অন্নদাবাবুর ছেলে যোগেন্দ্র রমেশের সহাধ্যায়ী। পাশের বাড়িতেই সে থাকে। অন্নদাবাবু ব্রাহ্ম । তাহার কন্যা হেমনলিনী এবার এফ. এ. দিয়াছে। রমেশ অন্নদtবাবুর বাড়ি চা থাইতে এবং চা না খাইতেও প্রায়ই যাইত । হেমনলিনী স্বানের পর চুল শুকাইতে শুকাইতে ছাদে বেড়াইয় পড়া মুখস্থ করিত। রমেশও সেই সময়ে বাসার নির্জন ছাদে চিলেকোঠার এক পাশে বই লইয়া বসিত। অধ্যয়নের পক্ষে এরূপ স্থান অনুকূল বটে, কিন্তু একটু চিন্তা করিয়া দেখিলেই বুঝিতে বিলম্ব হইবে না যে, ব্যাঘাতও যথেষ্ট ছিল । এ পর্বস্ত বিবাহ সম্বন্ধে কোনো পক্ষ হইতে কোনো প্রস্তাব হয় নাই। অন্নদাবাবুর দিক হইতে না হইবার একটু কারণ ছিল । একটি ছেলে বিলাতে ব্যারিস্টার হইবার জন্য গেছে, তাহার প্রতি অন্নদাবাবুর মনে মনে লক্ষ্য আছে। সেদিন চায়ের টেবিলে খুব একটা তর্ক উঠিয়াছিল। অক্ষয় ছেলেটি বেশি পাস করিতে পারে নাই । কিন্তু তাই বলিয়া সে-বেচারার চা-পানের এবং অন্তান্ত শ্রেণীর তৃষা পাস-করা ছেলেদের চেয়ে কিছু কম ছিল, তাহা নহে। স্বতরাং হেমনলিনীর চায়ের টেবিলে তাহাকেও মাঝে মাঝে দেখা যাইত। সে তর্ক তুলিয়াছিল যে, পুরুষের বুদ্ধি খঙ্গের মতে, শান বেশি না দিলেও কেবল ভারে অনেক কাজ করিতে পারে ; মেয়েদের বুদ্ধি কলমকাটা ছুরির মতো, যতই ধার দাও না কেন, তাহাতে কোনো বৃহৎ কাজ চলে না— ইত্যাদি। হেমনলিনী অক্ষয়ের এই প্ৰগল্‌ভতা নীরবে