পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

cनौकाछूबेि ›ፃ » সমস্ত দিন অসহ গরম । আকাশে মেঘ নাই, অথচ একটা বিবর্ণ আচ্ছাদনে চারিদিক ঢাকা পড়িয়াছে— তীরের তরুশ্রেণী পাংশুবর্ণ। গাছের পাতা নড়িতেছে না। দাড়িমাঝিরা গলদঘর্ম। সন্ধ্যার অন্ধকার জমিবার পূর্বেই মাল্লারা কহিল, “কর্তা, নৌকা এইবার ঘাটে বাধি— সম্মুখে অনেকদূর আর নৌকা রাখিবার জায়গা নাই।” ব্রজমোহনবাবু পথে বিলম্ব করিতে চান না। তিনি কহিলেন, “এখানে বাধিলে চলিবে না। আজ প্রথম রাত্রে জ্যোংস্কা আছে, আজ বালুহাটায় পৌছিয়া নৌকা বাধিব । তোরা বকশিশ পাইবি ।” নৌকা গ্রাম ছাড়াইয়া চলিয়া গেল। এক দিকে চর ধুধু করিতেছে, আর-এক দিকে ভাঙা উচ্চ পাড়। কুহেলিকার মধ্যে চাদ উঠিল, কিন্তু তাহাকে মাতালের চক্ষুর মতো অত্যন্ত ঘোলা দেখাইতে লাগিল । এমন সময় আকাশে মেঘ নাই, কিছু নাই, অথচ কোথা হইতে একটা গর্জনধ্বনি শোনা গেল। পশ্চাতে দিগন্তের দিকে চাহিয়া দেখা গেল, একটা প্রকাও অদৃশ্য সম্মার্জনী ভাঙা ডালপালা, খড়কুটা, ধুলাবালি আকাশে উড়াইয়া প্রচণ্ডবেগে ছুটিয়া আসিতেছে। ‘রাখ, রাখ, সামাল সামাল, হায় হায়’ করিতে করিতে মুহূর্তকাল পরে কী হইল, কেহই বলিতে পারিল না। একটা ঘূর্ণ হাওয়া একটি সংকীর্ণ পথমাত্র আশ্রয় করিয়া প্রবলবেগে সমস্ত উন্মলিত বিপর্যস্ত করিয়া দিয়া নৌকা-কয়টাকে কোথায় কী করিল, তাহার কোনো উদ্দেশ পাওয়া গেল না । Nව්‍ර কুহেলিকা কাটিয়া গেছে। বহুদূরব্যাপী মরুময় বালুভূমিকে নির্মল জ্যোৎস্না বিধবার শুভ্ৰবসনের মতো আচ্ছন্ন করিয়াছে। নদীতে নৌকা ছিল না, ঢেউ ছিল না, রোগযন্ত্রণার পরে মৃত্যু যেরূপ নির্বিকার শাস্তি বিকীর্ণ করিয়া দেয়, সেইরূপ শান্তি জলে স্থলে স্তন্ধভাবে বিরাজ করিতেছে । সংজ্ঞালাভ করিয়া রমেশ দেখিল, সে বালির তটে পড়িয়া আছে। কী ঘটিয়াছিল, তাহা মনে করিতে তাহার কিছুক্ষণ সময় গেল— তাহার পরে দুঃস্বপ্নের মতো সমস্ত ঘটনা তাহার মনে জাগিয়া উঠিল। তাহার পিতা ও অন্তান্ত আত্মীয়গণের কী দশা হইল সন্ধান করিবার জন্ত সে উঠিয়া পড়িল। চারিদিকে চাহিয়া দেখিল, কোথাও কাহারো কোনো চিহ্ন নাই। বালুতটের তীর বাহিয়া সে খুজিতে খুজিতে চলিল। i পদ্মার দুই শাখাবাহুর মাঝখানে এই শুভ্র দ্বীপটি উলম্ব শিশুর মতে উধ্বমুখে শয়ান রহিয়াছে। রমেশ যখন একটি শাখার তীরগ্রান্ত ঘুরিয়া অন্য শাখার তীরে গিয়া