পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী -לף צ. রাত্রে আহারের পর ঝি চলিয়া গেল। রমেশ কমলাকে তাহার বিছানা দেখাইয়া কহিল, “তুমি শোও, আমার এই বই পড়া হইলে আমি পরে শুইব ।” এই বলিয়া রমেশ একখানা বই খুলিয়া পড়িবার ভান করিল, শ্রাস্ত কমলার ঘুম আসিতে বিলম্ব হইল না। ’ সে-রাত্রি এমনি করিয়া কাটিল। পররাত্রেও রমেশ কোনো ছলে কমলাকে একলা বিছানায় শোয়াইয়া দিল । সেদিন বড়ো গরম ছিল। শোবার ঘরের সামনে একটুখানি খোলা ছাদ আছে, সেইখানে একটা শতরঞ্জি পাতিয়া রমেশ শয়ন করিল এবং নানা কথা ভাবিতে ভাবিতে ও হাতপাখার বাতাস থাইতে খাইতে গভীর রাত্রে ঘুমাইয়া পড়িল । রাত্ৰি দুটা-তিনটার সময় আধঘুমে রমেশ অঙ্গভব করিল, সে একলা শুইয়া নয় এবং তাহার পাশে আস্তে আস্তে একটি হাতপাখা চলিতেছে। রমেশ ঘুমের ঘোরে পার্শ্ববর্তিনীকে কাছে টানিয়া লইয়া বিজড়িতম্বরে কহিল, “সুশীলা, তুমি ঘুমাও, আমাকে পাখা করিতে হইবে না।” অন্ধকারভীরু কমলা রমেশের বাহুপাশে তাহার বক্ষপট আশ্রয় করিয়া আরামে ঘুমাইয়া পড়িল । ভোরের বেলায় রমেশ জাগিয়া চমকিয়া উঠিল । দেখিল, নিদ্রিত কমলার ডান হাতখানি তাহার কণ্ঠে জড়ানো— সে দিব্য অসংকোচে রমেশের পরে আপন বিশ্বস্ত আধিকার বিস্তার করিয়া তাহার বক্ষে লগ্ন হইয়া আছে । নিদ্রিত বালিকার মুখের দিকে চাহিয়া রমেশের দুই চোখ জলে ভরিয়া আসিল । এই সংশয়হীন কোমল বাহুপাশ সে কেমন করিয়া বিচ্ছিন্ন করিবে ? রাত্রে বালিকা যে কখন এক সময় তাহার পাশে আসিয়া তাহাকে আস্তে আস্তে বাতাস করিতেছিল, সে-কথাও তাহার মনে পড়িল— দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া ধীরে ধীরে বালিকার বাহুবন্ধন শিথিল করিয়া রমেশ বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া গেল । অনেক চিন্তা করিয়া রমেশ বালিকাবিদ্যালয়ের বোর্ডিঙে কমলাকে রাখা স্থির করিয়াছে । তাহা হইলে এখনকার মতো অন্তত কিছুকাল সে ভাবনার হাত হইতে * উদ্ধার পায় । ij রমেশ কমলাকে জিজ্ঞাসা করিল, “কমলা, তুমি পড়াশুনা করিবে ?” কমল রমেশের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল— ভাবটা এই যে, “তুমি কী বল ?” রমেশ লেখাপড়ার উপকারিতা ও আনন্দের সম্বন্ধে অনেক কথা বলিল। তাহার কিছু প্রয়োজন ছিল না, কমলা কহিল, “আমাকে gাড়াশুনা শেখাও।” রমেশ কহিল, “তাহা হইলে তোমাকে ইস্কুলে যাইতে হইবে।”