পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি > m。 কমলা বিস্মিত হইয়া কহিল, “ইস্কুলে ? এতবড়ো মেয়ে হইয়। আমি ইস্কুলে যাইব ?” কমলার এই বয়োমর্যাদার অভিমানে রমেশ ঈষং হাসিয়া কহিল, “তোমার চেয়েও অনেক বড়ো মেয়ে ইস্কুলে যায় ।” কমলা তাহার পরে আর কিছু বলিল না, গাড়ি করিয়া এক দিন রমেশের সঙ্গে ইস্কুলে গেল । প্রকাও বাড়ি— তাহার চেয়ে অনেক বড়ো এবং ছোটো কত যে মেয়ে, তাহার ঠিকানা নাই। বিদ্যালয়ের কত্রীর হাতে কমলাকে সমর্পণ করিয়া রমেশ যখন চলিয়া আসিতেছে, কমলাও তাহার সঙ্গে সঙ্গে আসিতে লাগিল । রমেশ কহিল, “কোথায় আসিতেছ ? তোমাকে যে এইখানে থাকিতে হইবে।” কমলা ভীতকণ্ঠে কহিল, “তুমি এখানে থাকিবে না ?” রমেশ । আমি তো এখানে থাকিতে পারি না । কমলা রমেশের হাত চাপিয়া ধরিয়া কহিল, "তবে আমি এখানে থাকিতে পারিব না, আমাকে লইয়া চলো ।” রমেশ হাত ছাড়াইয়া কহিল, “ছি কমলা ৷” এই ধিক্কারে কমলা স্তব্ধ হইয়া দাড়াইল, তাহার মুখখানি একেবারে ছোটো হইয় গেল। রমেশ ব্যথিতচিত্তে তাড়াতাড়ি প্রস্থান করিল, কিন্তু বালিকার সেই স্তম্ভিত অসহায় ভীত মুখশ্ৰী তাহার মনে মুদ্রিত হইয়া রহিল। এইবার আলিপুরে ওকালতির কাজ শুরু করিয়া দিবে, রমেশের এইরূপ সংকল্প ছিল । কিন্তু তাহার মন ভাঙিয়া গেছে। চিত্ত স্থির করিয়া কাজে হাত দিবার এবং প্রথম কার্যারম্ভের নানা বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করিবার মতে ফতি তাহার ছিল না। সে এখন কিছুদিন গঙ্গার পোলের উপর এবং গোলদিঘিতে অনাবশ্বক ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল । একবার মনে করিল, কিছুদিন পশ্চিমে ভ্রমণ করিয়া আসি, এমন সময় অন্নদাবাবুর কাছ হইতে একখানি চিঠি পাইল । অন্নদাবাবু লিখিতেছেন, “গেজেটে দেখিলাম, তুমি পাস হইয়াছ— কিন্তু সে খবর তোমার নিকট হইতে না পাইয়া দুঃখিত হইলাম । বহুকাল তোমার কোনো সংবাদ পাই নাই। তুমি কেমন আছ এবং কবে কলিকাতায় আসিবে, জানাইয়া আমাকে নিশ্চিস্ত ও সুখী করিবে ।” এখানে বলা অপ্রাসঙ্গিক হইবে না যে, অন্নদাবাবু ষে বিলাতগত ছেলেটির পরে