পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০১

নৌকাডুবি 'כ"ט צ সে গাড়িতে চড়িয়া বসিল । একান্ত চেষ্টায় সংকোচ কাটাইয়া হেমনলিনীকে জিজ্ঞাসা করিল, “আপনি ভালো আছেন ?” হেমনলিনী কুশলপ্রশ্নের উত্তর না দিয়াই কহিল, “আপনি পাস হইয়া আমাদের ষে এক বার খবর দিলেন না বড়ো ?” রমেশ এই প্রশ্নের কোনো জবাব খুজিয়া না পাইয়া কহিল, “আপনিও পাস হইয়াছেন দেখিলাম।” হেমনলিনী হাসিয়া কহিল, "তবু ভালো, আমাদের খবর রাখেন !” অন্নদাবাবু কহিলেন, “তুমি এখন বাসা কোথায় করিয়াছ ?” রমেশ কহিল, “দরজিপাড়ায় ।” অন্নদাবাবু কহিলেন, “কেন, কলুটোলায় তোমার সাবেক বাসা তো মন্দ ছিল না।” উত্তরের অপেক্ষায় হেমনলিনী বিশেষ কৌতুহলের সহিত রমেশের দিকে চাহিল। সেই দৃষ্টি রমেশকে আঘাত করিল— সে তৎক্ষণাৎ বলিয়া ফেলিল, “হা, সেই বাসাতেই ফিরিব স্থির করিয়াছি।” তাহার এই বাসা-বদল করার অপরাধ যে হেমনলিনী গ্রহণ করিয়াছে, তাহ। রমেশ বেশ বুঝিল— সাফাই করিবার কোনো উপায় নাই জানিয়া সে মনে মনে পীড়িত হইতে লাগিল। অন্য পক্ষ হইতে আর কোনো প্রশ্ন উঠিল না। হেমনলিনী গাড়ির বাহিরে পথের দিকে চাহিয়া রহিল। রমেশ আর থাকিতে না পারিয়া অকারণে আপনি কহিয়া উঠিল, “আমার একটি আত্মীয় হেদুয়ার কাছে থাকেন, র্তাহার খবর লইবার জন্য দরজিপাড়ায় বাসা করিয়াছি।” রমেশ নিতাস্ত মিথ্যা বলিল না, কিন্তু কথাটা কেমন অসংগত শুনাইল । মাঝে মাঝে আত্মীয়ের খবর লইবার পক্ষে কলুটোলা হেদুয়া হইতে এতই কি দূর ? হেমনলিনীর দুই চক্ষু গাড়ির বাহিরে পথের দিকেই, নিবিষ্ট হইয়া রহিল। হতভাগ্য রমেশ ইহার পরে কী বলিবে, কিছুই ভাবিয়া পাইল না। এক বার কেবল জিজ্ঞাসা করিল, “যোগেনের খবর কী ?” অন্নদাবাবু কহিলেন, “সে আইন-পরীক্ষায় ফেল করিয়া পশ্চিমে হাওয়া খাইতে গেছে ।” গাড়ি যথাস্থানে পৌছিলে পর পরিচিত ঘর ও গৃহসজ্জাগুলি রমেশের উপর মন্ত্ৰজাল বিস্তার করিয়া দিল। রমেশের বুকের মধ্য হইতে গভীর দীর্ঘনিশ্বাস উখিত হইল । F রমেশ কিছু না বলিয়াই চা খাইতে লাগিল। অন্নদাবাৰু হঠাৎ জিজ্ঞাসা করিলেন, "এবার তো তুমি অনেক দিন বাড়িতে ছিলে, কাজ ছিল বুৰি ?” t|SW2