পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী جمالا রমেশ কহিল, “বাবার মৃত্যু হইয়াছে।” অন্নদা। স্যা, বল কী ! সে কী কথা ! কেমন করিয়া হইল ? 嘯 রমেশ । তিনি পদ্মা বাহিয়া নৌকা করিয়া বাড়ি আসিতেছিলেন, হঠাৎ ঝড়ে নৌকা ডুবিয়া তাহার মৃত্যু হয়। একটা প্রবল হাওয়া উঠিলে যেমন অকস্মাৎ ঘন মেঘ কাটিয়া আকাশ পরিষ্কার হইয়া যায়, তেমনি এই শোকের সংবাদে রমেশ ও হেমনলিনীর মাঝখানকার মানি মুহূর্তের মধ্যে কাটিয়া গেল। হেম অমৃতাপসহকারে মনে মনে কহিল, রমেশবাবুকে ভুল বুঝিয়াছিলাম— তিনি পিতৃবিয়োগের শোকে এবং গোলমালে উদভ্ৰান্ত হইয়া ছিলেন। এখনো হয়তো তাহাই লইয়া উন্মনা হইয়া আছেন। উহার সাংসারিক কী সংকট ঘটিয়াছে, উহার মনের মধ্যে কী ভার চাপিয়াছে, তাহা কিছুই না জানিয়াই আমরা উহাকে দোষী করিতেছিলাম।” হেমনলিনী এই পিতৃহীনকে বেশি করিয়া যত্ব করিতে লাগিল । রমেশের জাহারে অভিরুচি ছিল না, হেমনলিনী তাহাকে বিশেষ পীড়াপীড়ি করিয়া খাওয়াইল । কহিল, “আপনি বড়ো রোগ হইয়া গেছেন, শরীরের অষত্ব করিবেন না ।” অন্নদীবাবুকে কহিল, “বাবা, রমেশবাবু আজ রাত্রেও এইখানেই থাইয়া যান না।” অন্নদাবাবু কহিলেন, “বেশ তো ।” এমন সময় অক্ষয় আসিয়া উপস্থিত। অন্নদাবাবুর চায়ের টেবিলে কিছুকাল অক্ষয় একাধিপত্য করিয়া আসিয়াছে । আজ সহসা রমেশকে দেখিয় সে থমকিয়া গেল। আত্মসংবরণ করিয়া হাসিয়া কহিল, “এ কী ! এ ষে রমেশবাবু। আমি বলি, আমাদের বুঝি একেবারেই ভুলিয়া গেলেন।” রমেশ কোনো উত্তর না দিয়া একটুখানি হাসিল। অক্ষয় কহিল, “আপনার বাবা আপনাকে যে-রকম তাড়াতাড়ি গ্রেফতার করিয়া লইয়া গেলেন, আমি ভাবিলাম, তিনি এবার আপনার বিবাহ না দিয়া কিছুতেই ছাড়িবেন না— ফাড় কাটাইয় আসিয়াছেন তো ?” _. হেমনলিনী অক্ষয়কে বিরক্তিদৃষ্টিদ্বারা বিদ্ধ করিল। অন্নদাবাবু কহিলেন, “অক্ষয়, রমেশের পিতৃবিয়োগ হইয়াছে।” o রমেশ বিবর্ণ মুখ নত করিয়া বসিয়া রহিল। তাহাকে বেদনার উপর ব্যথা দিল বলিয়া হেমনলিনী অক্ষয়ের প্রতি মনে মনে ভারি রাগ করিল। রমেশকে তাড়াতাড়ি কহিল, “রমেশবাবু, আপনাকে আমাদের নূতন অ্যালবমখানা দেখানো হয় নাই।” বলিয়া অ্যালবম আনিয়া রমেশের টেবিলের এক প্রাস্তে লইয়া গিয়া ছবি লইয়