পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি 〉br● আলোচনা করিতে লাগিল এবং এক সময়ে আস্তে আস্তে কহিল, "রমেশবাবু, আপনি বোধ হয় নূতন বাসায় একলা থাকেন ?” g রমেশ কহিল, “ই ।” হেমনলিনী। আমাদের পাশের বাড়িতে আসিতে আপনি দেরি করিবেন না। রমেশ কহিল, “না, আমি এই সোমবারেই নিশ্চয় আসিব ।” হেমনলিনী । মনে করিতেছি, আমাদের বি এর ফিলজফি আপনার কাছে মাঝে মাঝে বুঝাইয়া লইব । রমেশ তাহাতে বিশেষ উৎসাহ প্রকাশ করিল। صوا রমেশ পূর্বের বাসায় আসিতে বিলম্ব করিল না । ইহার আগে হেমনলিনীর সঙ্গে রমেশের যতটুকু দূরভাব ছিল, এবারে তাহ আর রহিল না। রমেশ যেন একেবারে ঘরের লোক। হাসিকৌতুক নিমন্ত্রণ-আমন্ত্রণ খুব জমিয়া উঠিল । অনেক কাল অনেক পড়া মুখস্থ করিয়া ইতিপূর্বে হেমনলিনীর চেহার একপ্রকার ক্ষণভঙ্গুর গোছের ছিল। মনে হইত, যেন একটু জোরে হাওয়া লাগিলেই শরীরট কোমর হইতে হেলিয়া ভাঙিয়া পড়িতে পারে। তখন তাহার কথা অল্প ছিল, এবং তাহার সঙ্গে কথা কহিতেই ভয় হইত— পাছে সামান্ত কিছুতেই সে অপরাধ লয়। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই তাহার আশ্চর্য পরিবর্তন হুইয়াছে । তাহার পাংশুবর্ণ কপোলে লবণ্যের মন্থণতা দেখা দিল । তাহার চক্ষু এখন কথায় কথায় হাস্তচ্ছটায় নাচিয়া উঠে। আগে সে বেশভূষায় মনোযোগ দেওয়াকে চাপল্য, এমনকি, অন্যায় মনে করিত। এখন কারও সঙ্গে কোনো তর্ক না করিয়া কেমন করিয়া যে তাহার মত ফিরিয়া আসিতেছে, তাহ অন্তর্যামী ছাড়া আর কেহ বলিতে পারে না । কর্তব্যবোধের দ্বারা ভারাক্রাস্ত রমেশও বড়ো কম গম্ভীর ছিল না। বিচারশক্তির প্রাবল্যে তাহার শরীরমন যেন মন্থর হইয়া গিয়াছিল। আকাশের জ্যোতির্ময় গ্ৰহতার চলিয়া ফিরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, কিন্তু মানমন্দির আপনার যন্ত্রতন্ত্ৰ লইয়া অত্যন্ত সাবধানে স্তন্ধ হইয়া বসিয়া থাকে— রমেশ সেইরূপ এই চলমান জগৎসংসারের মাঝখানে আপনার পুথিপত্র যুক্তিতর্কের আয়োজনতারে স্তম্ভিত হইয়া ছিল,