পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি ఎలీ আপনার সঙ্গে আলোচনা করিবার শখ আমার নাই । আপনার সংগীতচর্চায় বাধা দিয়া অপরাধী হইয়াছি— মাপ করিবেন। আপনি পুনর্বার শুরু করুন, আমি বিদায় হইলাম । এই বলিয়া অক্ষয় দ্রুতবেগে বাহির হইয়া গেল। ইহার পরে অত্যন্ত বেস্থর সংগীতচর্চাও আর চলে না। রমেশ মাথার নীচে দুই হাত রাখিয়া বিছানার উপরে চিত হইয়া শুইয়া পড়িল। অনেকক্ষণ এইভাবে গেল। হঠাৎ ঘড়িতে টং টং করিয়া পাচটা বাজিল শুনিয়াই সে দ্রুত উঠিয়া পড়িল । কী কর্তব্য স্থির করিল তাহ অন্তর্যামীই জানেন— কিন্তু আণ্ড প্রতিবেশীর ঘরে গিয়া যে পেয়ালা-দুয়েক চা খাওয়া কর্তব্য, সে সম্বন্ধে তাহার মনে দ্বিধামাত্র রহিল না । হেমনলিনী চকিত হইয়া কহিল, "রমেশবাবু, আপনার কি অস্থখ করিয়াছে ?” রমেশ কহিল, “বিশেষ কিছু না।” অন্নদাবাবু কহিলেন, “আর কিছুই নয়, হজমের গোল হইয়াছে— পিত্তাধিক্য । আমি যে পিল ব্যবহার করিয়া থাকি তাহার একটা খাইয়া দেখো দেখি—” হেমনলিনী হাসিয়া কহিল, “বাবা, ওই পিল পাওয়াও নাই, তোমার এমন আলাপী কেহ দেখি না— কিন্তু তাহাদের এমন কী উপকার হইয়াছে ?” অন্নদা। অনিষ্ট তো হয় নাই । আমি ষে নিজে পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি— এ পর্যস্ত যতরকম পিল খাইয়াছি, এইটেই সব চেয়ে উপকারী । হেমনলিনী। বাবা, যখন তুমি একটা নূতন পিল খাইতে আরম্ভ কর, তখনি কিছুদিন তাহার অশেষ গুণ দেখিতে পাও— অন্নদা। তোমরা কিছুই বিশ্বাস কর না— আচ্ছা, অক্ষয়কে জিজ্ঞাসা করিয়ো দেখি, আমার চিকিৎসায় সে উপকার পাইয়াছে কি না। সেই প্রামাণিক সাক্ষীকে তলবের ভয়ে হেমনলিনীকে নিরুত্তর হইতে হইল। কিন্তু সাক্ষী আপনি আসিয়া হাজির হইল। আসিয়াই অন্নদাবাবুকে কহিল, "অন্নদাবাৰু, আপনার সেই পিল আমাকে অfর-একটি দিতে হইবে । বড়ো উপকার হইয়াছে। আজ শরীর এমনি হালকা বোধ হইতেছে!” অন্নদাবাবু সগর্বে র্তাহার কস্তার মুখের দিকে তাকাইলেন।