পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী 8هج لا ১২ পিল খাওয়ার পর অন্নদাবাবু অক্ষয়কে শীঘ্ৰ ছাড়িতে চাহিলেন না। অক্ষয়ও যাইবার জন্য বিশেষ ত্বর প্রকাশ না করিয়া মাঝে মাঝে রমেশের মুখের দিকে কটাক্ষপাত করিতে লাগিল। রমেশের চোখে সহজে কিছু পড়ে না— কিন্তু আজ অক্ষয়ের এই কটাক্ষগুলি তাহার চোখ এড়াইল না। ইহাতে তাহাকে বার বার উদ্বেজিত করিয়া তুলিতে লাগিল । পশ্চিমে বেড়াইতে যাইবার সময় নিকটবর্তী হইয়া উঠিয়াছে— মনে মনে তাহারই আলোচনায় হেমনলিনীর চিত্ত আজ বিশেষ প্রফুল্ল ছিল। সে ঠিক করিয়া রাখিয়াছিল, আজ রমেশবাবু আসিলে ছুটিষাপন সম্বন্ধে তাহার সঙ্গে নানাপ্রকার পরামর্শ করিবে । সেখানে নিভৃতে কী কী বই পড়িয়া শেষ করিতে হইবে, দুজনে মিলিয় তাহার একটা তালিকা করিবার কথা ছিল। স্থির ছিল, রমেশ আজ সকাল সকাল আসিবে, কেননা, চায়ের সময়ে অক্ষয় কিংবা কেহ-না-কেহ আসিয়া পড়ে, তখন মন্ত্রণা করিবার অবসর পাওয়া যায় না । কিন্তু আজ রমেশ অন্যদিনের চেয়েও দেরি করিয়া আসিয়াছে। মুখের ভাবও তাহার অত্যন্ত চিন্তাযুক্ত। ইহাতে হেমনলিনীর উৎসাহে অনেকটা আঘাত পড়িল । কোনো-এক সুযোগে সে রমেশকে আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করিল, “আপনি আজ বড়ো যে দেরি করিয়া আসিলেন ?” রমেশ অন্যমনস্কভাবে একটু চুপ করিয়া থাকিয়া কহিল, “হা, আজকে একটু দেরি হইয়া গেছে বটে।” হেমনলিনী আজ তাড়াতাড়ি করিয়া কত সকাল-সকাল চুল বাধিয়া লইয়াছে। চুল-বাধা, কাপড়-ছাড়ার পরে সে আজ কতবার ঘড়ির দিকে তাকাইয়াছে— অনেকক্ষণ পর্যন্ত মনে করিয়াছে, তাহার ঘড়িটা ভূল চলিতেছে, এখনো বেশি দেরি হয় নাই। যখন এই বিশ্বাস রক্ষণ করা একেবারে অসাধ্য হইয়া উঠিল তখন সে জানলার কাছে বসিয়া একটা সেলাই লইয়া কোনোমতে মনের অধৈর্য শাস্ত রাখিবার চেষ্টা করিয়াছে। তাহার পরে রমেশ মুখ গভীর করিয়া আসিল— কী কারণে দেরি হইয়াছে, তাহার কোনোপ্রকার জবাবদিহি করিল না— আজ সকালসকাল আসিবার যেন কোনো শর্তই ছিল না। হেমনলিনী কোনোমতে চা-খাওয়া শেষ করিয়া লইল । ঘরের প্রান্তে একটি টিপাইয়ের উপরে কতকগুলি বই ছিল— হেমনলিনী কিছু বিশেষ উদ্যমের সহিত