পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sఎbr রবীন্দ্র-রচনাবলী অন্নদাবাৰু যথাসময়ে আসিয়া টেবিল অধিকার করিয়া বসিলেন। রমেশ ক্ষণে ক্ষণে চকিতভাবে দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করিতে লাগিল। পদশব হইল, কিন্তু ঘরে প্রবেশ করিল অক্ষয়। যথেষ্ট হৃদ্যত দেখাইয়া কহিল, “এই ষে রমেশবাবু, আমি আপনার বাসাতেই গিয়াছিলাম।” শুনিয়াই রমেশের মুখে উদ্বেগের ছায় পড়িল । অক্ষয় হাসিয়া কহিল, “ভয় কিসের রমেশবাবু? আপনাকে আক্রমণ করিতে যাই নাই। শুভসংবাদে অভিনন্দন প্রকাশ কর বন্ধুবান্ধবের কর্তব্য— তাহাই পালন করিতে গিয়াছিলাম।” এই কথায় অন্নদাবাবুর মনে পড়িল, হেমনলিনী উপস্থিত নাই। হেমনলিনীকে ডাক দিলেন— উত্তর না পাইয়। তিনি নিজে উপরে গিয়া কহিলেন, “হেম, এ কী, এখনো সেলাই লইয়া বসিয়া আছ ? চা তৈরি যে । রমেশ-অক্ষয় আসিয়াছে।” হেমনলিনী মুখ ঈষৎ লাল করিয়া কহিল, “বাবা, আমার চা উপরে পাঠাইয়া দাও, অrজ আমি সেলাইট শেষ করিতে চাই ।” অন্নদা। ওই তোমার দোষ হেম । যখন যেটা লইয়া পড়, তপন আর-কিছুই খেয়াল কর না । যখন পড়া লইয়া ছিলে, তখন বই কোল হইতে নামিত না— এখন সেলাই লইয়া পড়িয়াছ, এখন আর-সমস্তই বন্ধ । না না, সে হইবে না – চলে, নীচে গিয়া চা খাইবে চলো । এই বলিয়। অন্নদাবাবু জোর করিয়াই হেমনলিনীকে নীচে লইয়া আসিলেন । সে আসিয়াই কাহারও দিকে দৃষ্টি না করিয়া তাড়াতাড়ি চ ঢালিবার ব্যাপারে ভারি ব্যস্ত হইয়া উঠিল । *r অন্নদাবাবু অধীর হইয়া কহিলেন, “হেম, ও কী করিতেছ ? আমার পেয়ালায় চিনি দিতেছ কেন ? আমি তো কোনোকালেই চিনি দিয়া চা খাই না।” অক্ষয় টিপিটিপি হাসিয়া কহিল, “আজ উনি ঔদাষ সংবরণ করিতে পারিতেছেন না— আজ সকলকেই মিষ্ট বিতরণ করিবেন।” হেমনলিনীর প্রতি এই প্রচ্ছন্ন বিদ্রুপ রমেশের মনে মনে অসহ্য হইল। সে তৎক্ষণাং স্থির করিল, “আর যাই হউক, বিবাহের পরে অক্ষয়ের সহিত কোনো সম্পর্ক রাখা হইবে না।” অক্ষয় কহিল, “রমেশবাবু, আপনার নামটা বদলাইয় ফেলুন।” রমেশ এই রসিকতার চেষ্টায় অধিকতর বিরক্ত হইয়া কহিল, “কেন বলুন দেখি ?” অক্ষয় খবরের কাগজ খুলিয়া কহিল, “এই দেখুন, আপনার নামের একজন ছাত্র