পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२०० রবীন্দ্র-রচনাবলী “এ-রকম ঠাট্টা অসহ্য।” বলিয়া দ্রুতপদে হেমনলিনী উপরে চলিয়া গেল । এইবার কলিকাতায় আসার পর রমেশ বিশেষ যত্নের সহিত কমলার স্বামীর সন্ধান করিতেছিল। বহুকষ্টে, ধোবাপুকুরটা কোন জায়গায়, তাহ বাহির করিয়া কমলার মামা তারিণীচরণকে এক পত্র লিখিয়াছিল। উক্ত ঘটনার পরদিন প্রাতে রমেশ সেই পত্রের জবাব পাইল । তারিণীচরণ লিখিতেছেন, দুর্ঘটনার পরে তাহার জামাতা শ্ৰীমান নলিনাক্ষের কোনো সংবাদই পাওয়া যায় নাই। রংপুরে তিনি ডাক্তারি করিতেন— সেখানে চিঠি লিখিয়া তারিণীচরণ জানিয়াছেন, সেখানেও কেহ আজ পর্যন্ত র্তাহার কোনো খবর পায় নাই । র্তাহার জন্মস্থান কোথায়, তাহা তারিণীচরণের জানা নাই । কমলার স্বামী নলিনাক্ষ যে বাচিয়া আছেন, এ-অাশা আজ রমেশের মন হইতে একেবারে দূর হইল। সকালে রমেশের হাতে আরও অনেকগুলা চিঠি আসিয়া পড়িল । বিবাহের সংবাদ পাইয়া তাহার আলাপী পরিচিত অনেকে তাহাকে অভিনন্দন-পত্র লিখিয়াছে । কেহ-বা আহারের দাবি জানাইয়াছে, কেহ-বা, এতদিন সমস্ত ব্যাপারটা সে গোপন রাখিয়াছে বলিয়া, রমেশকে সকৌতুক তিরস্কার করিয়াছে। , ரி এমন সময়ে অন্নদাবাবুর বাড়ি হইতে চাকর একখানি চিঠি লইয়া রমেশের হাতে দিল। হাতের অক্ষর দেখিয়া রমেশের বুকের ভিতরটা দুলিয়া উঠিল। হেমনলিনীর চিঠি । রমেশ মনে করিল, “অক্ষয়ের কথা শুনিয়া হেমনলিনীর মনে সন্দেহ জন্মিয়াছে এবং তাহাই দূর করিবার জন্য সে রমেশকে পত্র লিথিয়াছে।” চিঠি খুলিয়া দেখিল, তাহাতে কেবল এই কটি কথা লেখা আছে— “অক্ষয়বাবু কাল আপনার উপর ভারি অন্যায় করিয়াছেন। মনে করিয়াছিলাম, আজ সকালেই আপনি আসিবেন, কেন আসিলেন না ? অক্ষয়বাবুর কথা কেন আপনি এত করিয়া মনে লইতেছেন ? আপনি তো জানেন, আমি তার কথা গ্রাহাই করি না। আপনি আজ সকালসকাল আসিবেন— আমি আজ সেলাই ফেলিয়া রাখিব।” এই কটি কথার মধ্যে হেমনলিনীর সান্থনাস্থধাপূর্ণ কোমল হৃদয়ের ব্যথা অনুভব করিয়া রমেশের চোখে জল আসিল। রমেশ বুঝিল, কাল হইতেই হেমনলিনী রমেশের বেদন শাস্ত করিবার জন্য ব্যগ্রহৃদয়ে প্রতীক্ষা করিয়া আছে। এমনি করিয়া রাত গিয়াছে, এমনি করিয়া সকালট কাটিয়াছে, অবশেষে আর থাকিতে না পারিয়া এই চিঠিখানি লিখিয়াছে।