পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি వovరి গেল। ক্ষণকাল রমেশের মুখের দিকে তাকাইয়া কহিলেন, “সে কী কথা রমেশ ! নিমন্ত্রণ যে হইয়া গেছে।” রমেশ কহিল, “এই রবিবারের পরের রবিবারে দিন পিছাইয়া দিয়া আজই পত্র বিলি করিয়া দেওয়া যাইতে পারে।” অন্নদা। রমেশ, তুমি আমাকে অবাক করিলে। একি মকদ্দম যে, তোমার স্ববিধামতো তুমি দিন পিছাইয়া মুলতুবি করিতে থাকিবে ? তোমার প্রয়োজনটা কী, শুনি । রমেশ । সে অত্যন্ত বিশেষ প্রয়োজন, বিলম্ব করিলে চলিবে না। অন্নদাবীবু বাতাহত কদলীবৃক্ষের মতো কেদারার উপর হেলান দিয়া পড়িলেন— কহিলেন, “বিলম্ব করিলে চলিবে না ! বেশ কথা, অতি উত্তম কথা । এখন তোমার যাহা ইচ্ছা হয় করে । নিমন্ত্রণ ফিরাইয়া লইবার ব্যবস্থা তোমার বুদ্ধিতে যাহা আসে, , তাহাই হোক। লোকে যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করিবে, আমি বলিব, ‘আমি ও-সব কিছুই জানি না— তাহার কী আবশ্বক, সে তিনিই জানেন, আর কবে তাহার সুবিধা হইবে, সে তিনিই বলিতে পারেন।’ ” রমেশ উত্তর না করিয়া নতমুখে বসিয়া রহিল। অন্নদাবাৰু কহিলেন, “হেমনলিনীকে সব কথা বলা হইয়াছে ?” রমেশ । না, তিনি এখনো জানেন না । অন্নদা। তাহার তো জানা আবশ্যক। তোমার তো একলার বিবাহ নয়। রমেশ । আপনাকে আগে জানাইয় তাহাকে জানাইব স্থির করিয়াছি । অন্নদাবাবু ডাকিয়া উঠিলেন, “হেম, হেম।” 喙 হেমনলিনী ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া কহিল, "কী বাবা ?” অন্নদা। রমেশ বলিতেছেন, উহার কী-একটা বিশেষ কাজ পড়িয়াছে, এখন উহার বিবাহ করিবার অবকাশ হইবে না। হেমনলিনী এক বার বিবর্ণমুখে রমেশের মুখের দিকে চাহিল। রমেশ অপরাধীর মতো নিরুত্তরে বসিয়া রহিল। হেমনলিনীর কাছে এ-খবরটা ষে এমন করিয়া দেওয়া হইবে, রমেশ তাহ প্রত্যাশা করে নাই। অপ্রিয় বার্তা অকস্মাং এইরূপ নিতান্ত রূঢ়ভাবে হেমনলিনীকে যে কিরূপ মর্মান্তিকরূপে আঘাত করিল, রমেশ তাহা নিজের ব্যথিত অন্তঃকরণের মধ্যেই সম্পূর্ণ অনুভব করিতে পারিল । কিন্তু ষে তীর এক বার নিক্ষিপ্ত হয়, তাহা আর ফেরে না— রমেশ যেন স্পষ্ট দেখিতে পাইল, এই নিষ্ঠুর তীর হেমনলিনীর হৃদয়ের ঠিক মাঝখানে গিয়া বিধিয়া রহিল।