পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী واہ ج রমেশ কহিল, “হা, অন্য উপায় আর কিছুই দেখি না।” অন্নদাবাৰু কহিলেন, “দেখে বাপু, তবে আমি ইহার মধ্যে নাই। যাহা-কিছু বন্দোবস্ত করিবার, সে তুমিই করিয়ো । আমি লোক হাসাইতে পারিব না। বিবাহ-ব্যাপারটাকে যদি নিজের মঞ্জি অনুসারে ছেলেখেলা করিয়া তোল, তবে আমার মতো বয়সের লোকের ইহার মধ্যে না থাকাই ভালো। এই লও তোমার নিমন্ত্রণের ফর্দ । ইতিমধ্যে আমি কতকগুলা টাকা খরচ করিয়া ফেলিয়াছি, তাহার অনেকটাই নষ্ট হইবে। এমনি করিয়া বার বার টাকা জলে ফেলিয়া দিতে পারি, এমন সংগতি আমার নাই।” রমেশ সমস্ত ব্যয় ও ব্যবস্থার ভার নিজের স্বন্ধে লইতেই প্রস্তুত হইল। সে উঠিবার উপক্রম করিতেছে, এমন সময় অন্নদাবাবু কহিলেন, “রমেশ, বিবাহের পরে তুমি কোথায় প্র্যাকটিস করিবে, কিছু স্থির করিয়াছ ? কলিকাতায় নয় ?” রমেশ কহিল, “না। পশ্চিমে একটা ভালো জায়গার সন্ধান করিতেছি ।” অন্নদা। সেই ভালো, পশ্চিমই ভালো। এটোয় তো মন্দ জায়গা নয়। সেখানকার জল হজমের পক্ষে অতি উত্তম— আমি সেখানে মাসখানেক ছিলাম— সেই এক মাসে আমার আহারের পরিমাণ ডবল বাড়িয়া গিয়াছিল। দেখো বাপু, সংসারে আমার ওই একটিমাত্র মেয়ে— আমি সর্বদা উহার কাছে-কাছে না থাকিলে সে-ও স্বল্পী হইবে না, আমিও নিশ্চিন্ত হইতে পারিব না। তাই আমার ইচ্ছা, তোমাকে একটা স্বাস্থ্যকর জায়গা বাছিয়া লইতে হইবে । অন্নদাবাবু রমেশের একটা অপরাধের অবকাশ পাইয়া সেই সুযোগে নিজের বড়ো বড়ো দাবিগুল উপস্থিত করিতে আরম্ভ করিলেন । সে-সময়ে রমেশকে তিনি যদি এটোয়া না বলিয়া গারে বা চেরাপুঞ্জির কথা বলিতেন, তবে তৎক্ষণাৎ সে রাজি হইত। সে কহিল, “যে আজ্ঞা, আমি এটোয়াতেই প্র্যাকটিস করিব।” এই বলিয়৷ রমেশ নিমন্ত্রণপ্রত্যাখ্যানের কার্যভার লইয়া প্রস্থান করিল। অনতিকাল পরে অক্ষয় ঘরে ঢুকিতেই অন্নদাবাবু কহিলেন, “রমেশ তাহার বিবাহের দিন এক সপ্তাহ পিছাইয়া দিয়াছে।” i. অক্ষয়। না না, আপনি বলেন কী ! সে কি কখনো হইতে পারে? পরশু যে বিবাহ । অন্নদা। হইতে তো না পারাই উচিত ছিল— সাধারণ লোকের তো এমনতরো হয় না। কিন্তু আজকাল তোমাদের যে-রকম কাগু দেখিতেছি, সবই সম্ভব। অক্ষয় অত্যন্ত মুখ গম্ভীর করিয়া আড়ম্বর-সহকারে চিন্তা করিতে লাগিল।