পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি २>¢ সঙ্গে সাক্ষাৎ হইলে আনন্দে রোমাঞ্চিত হইয় উঠেন না। এখন কেবল তুমিই বাকি আছ। তোমাকে আমি ভয় করি— তুমি স্বল্প আলোচনার লোক নও, মোট কাজটাই তোমার সহজে আসে— আমি কাহিল মানুষ, তোমার ঘা আমার সহ হইবে না। ’ যোগেন্দ্র। দেখো অক্ষয়, তোমার ঐ-সকল প্যাচালে চাল আমার ভালো লাগে না। বেশ বুঝিতেছি, একটা কী খবর তোমার বলিবার আছে, সেটাকে আড়াল করিয়া আমন দর-বৃদ্ধি করিবার চেষ্টা করিতেছ কেন ? সরলভাবে বলিয়া ফেলো, চুকিয়া যাক। n অক্ষয়। আচ্ছ বেশ, তাহা হইলে গোড়া হইতেই বলি– তুমি অনেক কথাই छांना मां । ՖԵ রমেশ দরজিপাড়ায় যে বাসায় ছিল, সে বাসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হইয়া যায় নাই, তাহা আর-কাহাকেও ভাড়া দেওয়া সম্বন্ধে রমেশ চিন্তা করিবার অবসর পায় নাই । সে এই কয়েক মাস সংসারের বাহিরে উধাও হইয়া গিয়াছিল, লাভক্ষতিকে বিচারের মধ্যেই আনে নাই । আজ সে প্রত্যুষে সেই বাসায় গিয়া ঘর-দুয়ার সাফ করাইয়া লইয়াছে, তক্তপোশের উপর বিছানা পাতাইয়াছে এবং আহারাদিরও বন্দোবস্ত করিয়া রাখিয়াছে। অাজ ইস্কুলের ছুটির পর কমলাকে আনিতে হইবে। সে এখনো দেরি আছে। ইতিমধ্যে রমেশ তক্তপোশের উপর চিত হইয়া ভবিষ্যতের কথা ভাবিতে লাগিল। এটোয়। সে কখনো দেখে নাই— কিন্তু পশ্চিমের দৃপ্ত কল্পনা করা কঠিন নহে। শহরের প্রান্তে তাহার বাড়ি– তরুশ্রেণীদ্বারা ছায়াখচিত বড়ো রাস্তা তাহার বাগানের ধার দিয়া চলিয়া গেছে — রাস্তার ও পারে প্রকাও মাঠ, তাহার মাঝে-মাঝে কৃপ, মাঝে মাঝে পশুপক্ষী তাড়াইবার জন্য মাচা বাধা। ক্ষেত্রসেচনের জন্ত গোরু দিয়া জল তোলা হইতেছে, সমস্ত মধ্যাহ্নে তাহার করুণ শব্দ শোনা যায়– রাস্ত দিয়া প্রচুর ধুলা উড়াইয়া মাঝে-মাঝে একাগাড়ি ছটিয়াছে, তাহার ঝন ঝন শব্দে রৌজদগ্ধ আকাশ জাগিয়া উঠিতেছে। এই স্থদুর প্রবাসের প্রখর তাপ, উদাস মধ্যাহ্ন ও শূন্ত নির্জনতার মধ্যে সে তাহার রুদ্ধদ্বার বাংলাঘরে সমস্তদিন হেমনলিনীকে এক কল্পনা করিতে গেলে ক্লেশ অনুভব করিত। তাহার পাশে চিরসখীরূপে কমলাকে দেখিয়া সে জারামবোধ করিল। իի . . . .