পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&〉や রবীন্দ্র-রচনাবলী

  • , , রমেশ ঠিক করিয়াছে, এখন সে কমলাকে কিছু বলিবে না। বিবাহের পর হেমনলিনী তাহাকে বুকের উপর টানিয়া লইয়া সুযোগ বুঝির সকরুণ স্নেহের সহিত ক্রমে ক্রমে তাহাকে তাহার প্রকৃত ইতিহাস জানাইবে,— যত অল্প বেদনা দিয়া সম্ভব কমলার জীবনের এই জটিল রহস্যজাল ধীরে ধীরে ছাড়াইয়া দিবে। তাহার পরে সেই দুর বিদেশে তাহদের পরিচিত সমাজের বাইরে, কোনোপ্রকার আঘাত না পাইয়া কমলা অতি সহজেই তাহাদের সঙ্গে মিশিয়া আপনার হইয়া যাইবে ।

তখন দ্বিপ্রহরে গলি নিস্তন্ধ ; যাহারা আপিসে যাইবার, তাহারা আপিসে গেছে, যাহারা না যাইবার, তাহারা দিবানিদ্রার আয়োজন করিতেছে। অনতিতপ্ত আশ্বিনের মধ্যাহটি মধুর হইয়া উঠিয়াছে— আগামী ছুটির উল্লাস এখনি যেন আকাশকে আনন্দের আভাস দিয়া মাখাইয়া রাখিয়াছে। রমেশ তাহার নির্জন বাসায় নিস্তব্ধ মধ্যাহ্নে মুখের ছবি উত্তরোত্তর ফলাও করিয়া আঁকিতে লাগিল । এমন সময়ে খুব একটা ভারী গাড়ির শব্দ শোনা গেল। সে গাড়ি রমেশের বাসার দ্বারের কাছে আসিয়া থামিল। রমেশ বুঝিল, ইস্কুলের গাড়ি কমলাকে পৌছাইয়া দিতে আসিতেছে। তাহার বুকের ভিতরটা চঞ্চল হইয়া উঠিল। কমলাকে কিরূপ দেখিবে, তাহার সঙ্গে কী ভাবে কথাবার্তা হইবে, কমলাই বা রমেশকে কী ভাবে গ্রহণ করিবে, হঠাৎ এই চিন্তা তাহাকে আন্দোলিত করিয়া তুলিল । নীচে তাহার দুই জন চাকর ছিল— প্রথমে তাহারা ধরাধরি করিয়া কমলার তোরঙ্গ লইয়া আসিয়া বারান্দায় রাখিল— তাহার পশ্চাতে কমলা ঘরের দ্বারের সম্মুখ পর্যন্ত আসিয়া থমকিয়া দাড়াইল, ভিতরে প্রবেশ করিল না । রমেশ কহিল, "কমলা, ঘরে এসো ।” কমলা একটা সংকোচের আক্রমণ কাটাইয়া লইয়া ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। ছুটির সময়ে রমেশ তাহাকে বিদ্যালয়ে ফেলিয়া রাখিতে চাহিয়াছিল, সে কান্নাকাটি করিয়া চলিয়া আসিয়াছে, এই ঘটনায় এবং কয়েক মাসের বিচ্ছেদে রমেশের সঙ্গে তাহার যেন একটু মনের ছাড়াছাড়ি হইয়া গেছে । তাই কমলা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া রমেশের মুখের দিকে না চাহিয়া একটুখানি ঘাড় বাকাইয়া খোলা দরজার বাহিরে চাহিয়া রহিল। রমেশ কমলাকে দেখিবামাত্র বিস্থিত হইয়া উঠিল। যেন তাহাকে আর-এক বার নূতন করিয়া দেখিল। এই কয় মাসে তাহার আশ্চর্য পরিবর্তন ঘটিয়াছে। অনতিপল্পবিতা লতার মতো সে অনেকটা বাড়িয়া উঠিয়াছে। পাড়াগেয়ে মেয়েটির অপরিস্ফুট সর্বাঙ্গে প্রচুর স্বাস্থ্যের যে একটি পরিপুষ্টতা ছিল, সে কোথায় গেল ? তাহার গোলগাল