পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२९९ রবীন্দ্র-রচনাবলী কমলা কহিল, “ই। উহার তোমাকে কী বলিতেছিল ?” রমেশ কহিল, “আমাকে জিজ্ঞাসা করিতেছিল, তুমি আমার কে হও ?” কমলা যদিও শ্বশুরবাড়ির অনুশাসনের অভাবে এখনো লজ্জা করিতে শেখে নাই, তবু আশৈশব-সংস্কার-বশে রমেশের এই কথায় তাহার মুখ রাঙা হইয়া উঠিল । রমেশ কহিল, “আমি উহাদিগকে উত্তর করিয়াছি, তুমি আমার কেউ হও না ।” কমলা ভাবিল, রমেশ তাহাকে অন্যায় লজ্জা দিয়া উৎপীড়ন করিতেছে। সে মুখ ফিরাইয়। তর্জনস্বরে কহিল, “যাও!” রমেশ ভাবিতে লাগিল, ‘কমলার কাছে সকল কথা কেমন করিয়া খুলিয়া বলিব ? কমলা হঠাৎ ব্যস্ত হইয়া উঠিল। কহিল, “ওই যা, তোমার ফল কাকে লইয়া যাইতেছে।” বলিয়া সে তাড়াতাড়ি পাশের ঘরে গিয়া কাক তাড়াইয়া ফলের থালা লইয়া আসিল । । রমেশের সম্মুখে থালা রাখিয়া কহিল, “তুমি খাইবে না ?” রমেশের আর আহারের উৎসাহ ছিল না, কিন্তু কমলার এই যত্নটুকু তাহার হৃদয় স্পর্শ করিল। সে কহিল, "কমলা, তুমি খাবে না ?” কমলা কহিল, “তুমি আগে খাও।” এইটুকু ব্যাপার, বেশি-কিছু নয়, কিন্তু রমেশের বর্তমান অবস্থায় এই হৃদয়ের কোমল আভাসটুকু তাহার বক্ষের ভিতরকার অশ্র-উৎসে গিয়া যেন ঘা দিল। রমেশ কোনো কথা না বলিয়া জোর করিয়া ফল খাইতে লাগিল । খাওয়ার পালা সাঙ্গ হইলে রমেশ কহিল, “কমলা, আজ রাত্রে আমরা দেশে যাইব ।” কমলা চোখ নিচু, মুখ বিষণ্ণ করিয়া কহিল, “সেখানে আমার ভালো লাগে না।” রমেশ । ইস্কুলে থাকিতে তোমার ভালো লাগে ? কমলা। না, আমাকে ইস্কুলে পাঠাইয়ো না। আমার লজ্জা করে। মেয়েরা আমাকে কেবল তোমার কথা জিজ্ঞাসা করে । রমেশ । তুমি কী বল ? কমলা। আমি কিছুই বলিতে পারি না। তাহারা জিজ্ঞাসা করিত, তুমি কেন আমাকে ছুটির সময়ে ইস্কুলে রাখিতে চাহিয়াছ— আমি— কমলা কথা শেষ করিতে পারিল না । তাহার হৃদয়ের ক্ষতস্থানে আবার ব্যথা বাজিয়া উঠিল। রমেশ । তুমি কেন বলিলে না, তিনি আমার কেহই হন না। কমলা রাগ করিয়া রমেশের মুখের দিকে কুটিল কটাক্ষে চাহিল ; কহিল, “ৰাও ”