পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२8 警 রবীন্দ্র-রচনাবলী রমেশ আশ্চর্য জানাইয়া কহিল, “বল কী ! বইয়ে লেখা আছে ? কতবড়ো বই ?” এই প্রশ্নে কমলা কিছু কুষ্ঠিত হইয়া কহিল, “বেশি বড়ো বই নয়, কিন্তু ছাপার বই। তাহাতে ছবিও দেওয়া আছে।” এতবড়ো প্রমাণের পর রমেশকে হার মানিতে হইল। তার পরে কমলা শিক্ষার বিবরণ শেষ করিয়া বিদ্যালয়ের ছাত্রী ও শিক্ষকদের কথা, সেখানকার দৈনিক কার্যধারা লইয়া বকিয়া যাইতে লাগিল। রমেশ অন্যমনস্ক হইয়া ভাবিতে ভাবিতে মাঝে মাঝে সাড়া দিয়া গেল। কখনো বা কথার শেষ স্বত্র ধরিয়া এক-আধটা প্রশ্নও করিল। একসময়ে কমলা বলিয়া উঠিল, “তুমি আমার কথা কিছুই শুনিতেছ না।” বলিয়া সে রাগ করিয়া তখনি উঠিয়া পড়িল । রমেশ ব্যস্ত হইয়া কহিল,“না না কমলা, রাগ করিয়ো না— আমি আজ ভালো নাই।” ভালো নাই শুনিয়া তখনি কমলা ফিরিয়া আসিয়া কহিল, “তোমার অস্থখ করিয়াছে ? কী হইয়াছে ?” রমেশ কহিল, “ঠিক অস্থখ নয়— ও কিছুই নয়— আমার মাঝে মাঝে অমন হইয়া থাকে— আবার এখনি চলিয়া যাইবে।” কমলা রমেশকে শিক্ষার সহিত আমোদ দিবার জন্য কহিল, “আমার ভূগোলপ্রবেশে পৃথিবীর ষে ছবি আছে, দেখিবে ?” রমেশ আগ্রহ প্রকাশ করিয়া দেখিতে চাহিল। কমলা তাড়াতাড়ি তাহার বই আনিয়া রমেশের সম্মুখে খুলিয়া ধরিল। কহিল, “এই-যে দুটো গোল দেখিতেছ, ইহা আসলে একটা । গোল জিনিসের দুটো পিঠ কি কখনো একসঙ্গে দেখা যায় ?” রমেশ কিঞ্চিৎ ভাবিবার ভান করিয়া কহিল, “চ্যাপ্টা জিনিসেরও দেখা যায় না।” কমলা কহিল,“সেইজন্য এই ছবিতে পৃথিবীর দুই পিঠ আলাদা করিয়া আঁকিয়াছে।” এমনি করিয়া সন্ধ্যাট কাটিয়া গেল । ২০ অন্নদাবাবু একান্তমনে আশা করিতেছিলেন, যোগেন্দ্র ভালো খবর লইয়া আসিবে, সমস্ত গোলমাল অতি সহজে পরিষ্কার হইয়া যাইবে । যোগেন্দ্র ও অক্ষয় যখন ঘরে জাসিয়া প্রবেশ করিল, অন্নদাবাবু ভীতভাবে তাহাদের মুখের দিকে চাহিলেন । যোগেন্দ্ৰ কহিল, “বাবা, তুমি যে রমেশকে এতদূর পর্যন্ত বাড়াবাড়ি করিতে দিবে, তাহা কে জানিত। এমন জানিলে আমি তোমাদের সঙ্গে তাহার আলাপ করাইয়া দিতাম না।”