পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি ૨૨ જે অন্নদাবাবু কহিলেন, "হরির মাকে ডাকিয়া দিব ? বাতাস করিবে ?” হেমনলিনী কহিল, “বাতাসের দরকার নাই বাবা।” অন্নদাবাবু পাশের ঘরে গিয়া বসিলেন। এই কন্যাটিকে ছয় মাসের শিশু-অবস্থায় রাখিয়া ইহার মা মারা যায়, সেই হেমের মার কথা তিনি ভাবিতে লাগিলেন। সেই সেবা, সেই ধৈর্য, সেই চিরপ্রসন্নতা মনে পড়িল । সেই গৃহলক্ষ্মীরই প্রতিমার মতো যে মেয়েটি এতদিন ধরিয়া তাহার কোলের উপর বাড়িয়া উঠিয়াছে তাহার অনিষ্ট-আশঙ্কায় তাহার হৃদয় ব্যাকুল হইয়া উঠিল। পাশের ঘরে বসিয়া বসিয়া তিনি মনে মনে তাহাকে সম্বোধন করিয়া বলিতে লাগিলেন, মা, তোমার সকল বিয় দূর হউক, চিরদিন তুমি স্বথে থাকো । তোমাকে স্বর্থী দেখিয়া, কুস্থ দেখিয়া, যাহাকে ভালোবাস তাহার ঘরের মধ্যে লক্ষ্মীর মতো প্রতিষ্ঠিত দেখিয়া, আমি যেন তোমার মার কাছে যাইতে পারি।’ এই বলিয়া জামার প্রান্তে আর্দ্র চক্ষু মুছিলেন। t মেয়েদের বুদ্ধির প্রতি ষোগেন্দ্রের পূর্ব হইতেই যথেষ্ট অবজ্ঞা ছিল, আজ তাহ আরও দৃঢ় হইল। ইহার প্রত্যক্ষ প্রমাণও বিশ্বাস করে না— ইহাদিগকে লইয়া কী করা যাইবে ? দুইয়ে দুইয়ে যে চার হইবেই, তাহাতে মানুষের স্থখই হউক আর দুঃখই হউক, তাহা ইহারা স্থলবিশেষে অনায়াসেই অস্বীকার করিতে পারে। যুক্তি যদি কালোকে কালোই বলে, আর ইহাদের ভালোবাসা তাহাকে বলে সাদা, তবে যুক্তিবেচারার উপরে ইহারা ভারি খাপা হইয়া উঠিবে। ইহাদিগকে লইয়া ষে কী করিয়া সংসার চলে, তাহ যোগেন্দ্র কিছুতেই ভাবিয়া পাইল না । ষোগেন্দ্র ডাকিল, “অক্ষয় ।” অক্ষয় ধীরে ধীরে ঘরে প্রবেশ করিল। যোগেন্দ্ৰ কহিল, “সব তো শুনিয়াছ, এখন ইহার উপায় কী ?” অক্ষয় কহিল, “আমাকে এ-সব কথার মধ্যে কেন মিছামিছি টান ভাই । আমি এতদিন কোনো কথাই বলি নাই, তুমি আসিয়াই জামাকে এই মুশকিলে ফেলিয়াছ।” যোগেন্দ্র । আচ্ছা, সে-সব নালিশের কথা পরে হইবে । এখন হেমনলিনীর কাছে রমেশকে নিজের মুখে সকল কথা কবুল না করাইলে উপায় দেখি না। অক্ষয়। পাগল হইয়াছ! মানুষ নিজের মুখে— R যোগেন্দ্র । কিংবা যদি একটা চিঠি লেখে, তাহা হইলে আরও ভালো হয় । তোমাকে এই ভার লইতেই হইবে। কিন্তু আর দেরি করিলে চলিবে না। অক্ষয় কছিল, “দেখি, কতদূর কী করিতে পারি।” & S \e