পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি పరిరి অক্ষয়কে দেখিতে পাইয়া রমেশ কমলাকে স্বদ্ধ লইয়া পালাইয়াছে, এই খবরে রমেশের বিরুদ্ধে যোগেন্দ্রের সমস্ত সন্দেহ নিশ্চিত বিশ্বাসে পরিণত হইল । যোগেন্দ্ৰ কহিল, “কিন্তু অক্ষয়, এ-সমস্ত যুক্তি কোনো কাজেই লাগিবে না। শুধু হেমনলিনী কেন, বাবাস্থদ্ধ ওই এক বুলি ধরিয়াছেন— তিনি বলেন, রমেশের নিজের মুখে শেষ কথা না শুনিয়া তিনি রমেশকে অবিশ্বাস করিতে পারিবেন না। এমন-কি, রমেশ আজও আসিয়া যদি বলে ‘আমি এখন কিছুই বলিব না, তবু নিশ্চয় বাবা তাহার সঙ্গে হেমের বিবাহ দিতে কুষ্ঠিত হন না। ইহাদের লইয়া আমি এমনি মুশকিলে পড়িয়াছি। বাবা হেমনলিনীর কিছুমাত্র কষ্ট সহ করিতে পারেন না ; হেম যদি আজ অণবদার করিয়া বসে ‘রমেশের অন্ত স্ত্রী থাকৃ— আমি তাহাকেই বিবাহ করিব, তবে বাবা বোধ হয় তাহাতেই রাজি হন । যেমন করিয়া হউক এবং যত শীঘ্র হউক, রমেশকে দিয়া কবুল করাইতেই হইবে । তোমার হতাশ হইলে চলিবে না। আমিই এ কাজে লাগিতে পারিতাম, কিন্তু কোনোপ্রকার ফন্দি আমার মাথায় আসে না, আমি হয়তে রমেশের সঙ্গে একটা মারামারি বাধাইয়া দিব। এখনো বুঝি তোমার মুখ ধোওয়া, চা খাওয়া হয় নাই ?” অক্ষয় মুখ ধুইয়া চা খাইতে থাইতে ভাবিতে লাগিল। এমন সময়ে অন্নদাবাৰু হেমনলিনীর হাত ধরিয়া চা খাইবার ঘরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। অক্ষয়কে দেখিবামাত্র হেমনলিনী ফিরিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল । যোগেন্দ্র রাগ করিয়া কহিল, “হেমের এ ভারি অন্যায়। বাবা, তুমি উহার এই সকল অভদ্রতায় প্রশ্রয় দিয়ে না। উহাকে জোর করিয়া এখানে আনা উচিত। হেম, হেম !” হেমনলিনী তখন উপরে চলিয়া গেছে। অক্ষয় কহিল, "যোগেন, তুমি জামার কেস আরও খারাপ করিয়া দিবে দেখিতেছি। উহার কাছে আমার সম্বন্ধে কোনো কথাটি কহিয়ে না। সময়ে ইহার প্রতিকার হইবে, জবৰ্দ্দস্তি করিতে গেলে সব মাটি হইয়া যাইবে।” এই বলিয়া অক্ষয় চা খাইয়া চলিয়া গেল। অক্ষয়ের ধৈর্ষের অভাব ছিল না। যখন সমস্ত লক্ষণ তাহার প্রতিকূলে তখনো সে লাগিয়া থাকিতে জানে। তাহার ভাবেরও কোনো বিকার হয় না। অভিমান করিয়া সে মুখ গভীর করে না বা রে চলিয়া যায় না। অনাদর-অবমাননায় সে অবিচলিত থাকে। লোকটা টেকসই । তাহার প্রতি যাহার ব্যবহার যেমনি হউক, সে টিকিয়া থাকে। অক্ষয় চলিয়া গেলে আবার অন্নদাবাবু হেমনলিনীকে ধরিয়া চায়ের টেবিলে উপস্থিত