পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী অন্নদাবাবু ত্রস্ত হইয়া উঠিয়া কহিলেন, “না, কী হইয়াছে ?” যোগেন্দ্র। রমেশ কাল তাহার স্ত্রীকে লইয়া গোয়ালদ মেলে দেশে যাইতেছিল, অক্ষয়কে সেই গাড়িতে উঠিতে দেখিয়া দেশে না গিয়া আবার সে কলিকাতায় পালাইয়া আসিয়াছে । হেমনলিনীর হাত কঁাপিয়া উঠিল, চা ঢালিতে চা পড়িয়া গেল। সে চৌকিতে বসিয়া পড়িল । যোগেন্দ্র তাহার মুখের দিকে এক বার কটাক্ষপাত করিয়া বলিতে লাগিল, “পালাইবার কী দরকার ছিল, আমি তো কিছুই বুঝিতে পারি না। অক্ষয়ের কাছে তো পূর্বেই সমস্ত প্রকাশ হইয়া গিয়াছিল। একে তো তাহার পুর্বের ব্যবহার যথেষ্ট হেয়, তাহার পরে এই ভীরুতা, এই চোরের মতো ক্রমাগত পালাইয়া বেড়ানো আমার কাছে অত্যন্ত জঘন্য মনে হয়। জানি না হেম কী মনে করে, কিন্তু এইরূপ পলায়নেই তাহার অপরাধের যথেষ্ট প্রমাণ হইতেছে।” হেমনলিনী কঁাপিতে কঁাপিতে চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া দাড়াইল ; কহিল, "দাদা, আমি প্রমাণের কোনো অপেক্ষ রাখি না। তোমরা তাহার বিচার করিতে চাও করো, আমি তাহার বিচারক নই।” যোগেন্দ্র । তোমার সঙ্গে যাহার বিবাহের সম্বন্ধ হইতেছে সে কি আমাদের নিঃসম্পর্ক ? হেমনলিনী । বিবাহের কথা কে বলিতেছে ? তোমরা ভাঙিয়া দিতে চাও ভাঙিয়া দাও— সে তোমাদের ইচ্ছা । কিন্তু আমার মন ভাঙাইবার জন্য মিথ্যা চেষ্টা করিতেছ । বলিতে বলিতে হেমনলিনী স্বরবদ্ধ হইয়া কাদিয়া উঠিল। অন্নদাবাবু তাড়াতাড়ি উঠিয় তাহার অশ্রুসিক্ত মুখ বুকে চাপিয়া ধরিয়া কহিলেন, “চলে হেম, আমরা উপরে যাই ।” ॐN© স্ট্রীমার ছাড়িয়া দিল। প্রথম দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরায় কেহই ছিল না। রমেশ একটি কামরা বাছিয়া লইয়। বিছানা পাতিয়া দিল। সকালবেলায় দুধ খাইয়া সেই কামরার দরজা খুলিয়া কমলা নদী ও নদীতীর দেখিতে লাগিল । রমেশ কহিল, “জান কমলা, আমরা কোথায় বাইতেছি ?” কমলা কহিল, “দেশে যাইতেছি।”