পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

는 86 রবীন্দ্র-রচনাবলী রমেশ কহিল, “নীচে পানওয়ালা পান বেচিতেছে।” এমনি করিয়া অতি সহজেই ঘরকন্না শুরু হইল। রমেশ মনে মনে উদবিগ্ন হইয়া উঠিল। সে ভাবিতে লাগিল, “দাম্পত্যের ভাবকে কেমন করিয়া ঠেকাইয়া রাখা যায় ?” গৃহিণীর পদ অধিকার করিয়া লইবার জন্য কমলা বাহিরের কোনো সহায়তা বা শিক্ষার প্রত্যাশা রাখে না । সে যতদিন তাহার মামার বাড়িতে ছিল, রাধিয়াছেবাড়িয়াছে, ছেলে মানুষ করিয়াছে, ঘরের কাজ চালাইয়াছে। তাহার নৈপুণ্য তৎপরতা ও কর্মের আনন্দ দেখিয়া রমেশের ভারি সুন্দর লাগিল ; কিন্তু সেই সঙ্গে এ কথাও সে ভাবিতে লাগিল, ভবিষ্যতে ইহাকে লইয়া কী ভাবে চলা যাইবে ? ইহাকে কেমন করিয়া কাছে রাখিব, অথচ দূরে রাখিয়া দিব ? দুই জনের মাঝখানে গণ্ডির রেখাটা কোনখানে টানা উচিত ? উভয়ের মধ্যে যদি হেমনলিনী থাকিত তাহ হইলে সমস্তই সুন্দর হইয়া উঠিত। কিন্তু সে আশা যদি ত্যাগ করিতেই হয়, তবে একলা কমলাকে লইয়া সমস্ত সমস্তার মীমাংসা যে কী করিয়া হইতে পারে তাহ ভাবিয়া পাওয়া কঠিন। রমেশ স্থির করিল, আসল কথাটা কমলাকে খুলিয়া বলাই উচিত, ইহার পর আর চাপিয়া রাখা চলে না । २8 তখনও বেলা যায় নাই, এমন সময় স্টীমার চরে ঠেকিয়া গেল। সেদিন অনেক ঠেলাঠেলিতেও ষ্টীমার ভাসিল না। উচু পাড়ের নীচে জলচর পাখিদের পদাঙ্কখচিত এক স্তর বালুকাময় নিম্নতট কিছু দূর হইতে বিস্তীর্ণ হইয়া নদীতে আসিয়া নামিয়াছে। সেইখানে গ্রামবধূরা তখন দিনাস্তের শেষ জলসঞ্চয় করিয়া লইবার জন্য ঘট লইয়া আসিয়াছিল। তাহদের মধ্যে কোনো কোনো প্ৰগলভ বিনা অবগুণ্ঠনে এবং কোনো কোনো ভীরু ঘোমটার অন্তরাল হইতে স্টীমারের দিকে চাহিয়া কৌতুহল মিটাইতেছিল। উর্ধ্বনাসিক স্পর্ধিত জলযানটার দুর্বিপাকে গ্রামের ছেলেগুলা পাড়ের উপরে দাড়াইয়। চীৎকারস্বরে ব্যঙ্গোক্তি করিতে করিতে নৃত্য করিতেছিল । ও পারের জনশূন্ত চরের মধ্যে স্বর্ব অন্ত গেল। রমেশ জাহাজের রেলিং ধরিয়া সন্ধ্যার আভায় দীপ্যমান পশ্চিম-দিগন্তের দিকে চুপ করিয়া চাহিয়া ছিল। কমলা তাহার বেড়া-দেওয়া রাধিবার জায়গা হইতে আসিয়া কামরার দরজার পাশে দাড়াইল । রমেশ শীঘ্র পশ্চাতে মুখ ফিরাইবে এমন সম্ভাবনা না দেখিয়া সে মৃদ্ধভাবে একটু