পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি २8S আধটু কালিল , তাহাতেও কোনো ফল হইল না ; অবশেষে তাহার চাবির গোছ দিয়া দরজায় ঠক্ ঠক্‌ করিতে লাগিল। শব্দ যখন প্রবলতর হইল তখন রমেশ মুখ ফিরাইল। কমলাকে দেখিয়া তাহার কাছে আসিয়া কহিল, “এ তোমার কিরকম ডাকিবার প্রণালী ?” কমলা কহিল, “তা, কিরকম করিয়া ডাকিব ?” রমেশ কহিল, “কেন, বাপ-মায়ে আমার নামকরণ করিয়াছিলেন কিসের জন্ত, যদি কোনো ব্যবহারেই না লাগিবে ? প্রয়োজনের সময় আমাকে রমেশবাবু বলিয়া ডাকিলে ক্ষতি কী ?” আবার সেই একই রকম ঠাট্ট ! কমলার কপোলে এবং কর্ণমূলে সন্ধ্যার জাভার উপরে আরও একটুখানি রক্তিম আভা যোগ দিল ; সে মাথা বাকাইয়া কহিল, “তুমি কী ষে বল তাহার ঠিক নাই। শোনে, তোমার খাবার তৈরি ; একটু সকালসকাল খাইয়া লও। আজ ও বেলায় ভালো করিয়া খাওয়া হয় নাই ।” নদীর বাতাসে রমেশের ক্ষুধাবোধ হইতেছিল। আয়োজনের অভাবে পাছে কমলা ব্যস্ত হইয়া পড়ে সেইজন্য কিছুই বলে নাই ; এমন সময়ে অযাচিত আহারের সংবাদে তাহার মনে ষে একটা মুখের আন্দোলন তুলিল তাহার মধ্যে একটু বৈচিত্র্য ছিল । কেবল ক্ষুধানিবৃত্তির আসন্ন সম্ভাবনার স্বথ নহে ; কিন্তু সে যখন জানিতেছে না তখনো ষে তাহার জন্ত একটি চিস্তা জাগ্রত আছে, একটি চেষ্টা ব্যাপৃত রহিয়াছে, তাহার সম্বন্ধে একটি কল্যাণের বিধান স্বতই কাজ করিয়া চলিয়াছে, ইহার গৌরব সে হৃদয়ের মধ্যে অনুভব না করিয়া থাকিতে পারিল না। কিন্তু ইহা তাহার প্রাপ্য নহে, এতবড়ে জিনিসটা কেবল ভ্রমের উপরেই প্রতিষ্ঠিত, এই চিন্তার নিষ্ঠুর আঘাতও সে এড়াইতে পারিল না ; সে শির নত করিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। কমলা তাহার মুখের ভাব দেখিয়া আশ্চর্ষ হইয়া কহিল, “তোমার বুঝি খাইতে ইচ্ছা নাই ? ক্ষুধা পায় নাই ? আমি কি তোমাকে জোর করিয়া খাইতে বলিতেছি ?” রমেশ তাড়াতাড়ি প্রফুল্পতার ভান করিয়া কহিল, “তোমাকে জোর করিতে হইবে কেন, আমার পেটের মধ্যেই জোর করিতেছে। এখন তো খুব চাবি ঠক্ ঠক্‌ করিয়া ডাকিয়া জানিলে, শেষকালে পরিবেষণের সময় ষেন দর্পহারী মধুসূদন দেখা না দেন ।” n এই বলিয়া রমেশ চারি দিকে চাহিয়া কহিল, “কই, খাদ্যদ্রব্য তো কিছু দেখি না। খুব ক্ষুধার জোর থাকিলেও এই আসবাবগুলা আমার হজম হুইবে না ; ছেলেবেলা