পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি р રે 8૭ এ ষে কেমন করিয়া সম্ভব হইতে পারে, আমি তো ভাবিয়া পাইতেছি না, কিন্তু তবু খাইতে চমৎকার লাগিতেছে।” এই বলিয়া রমেশ তত্ত্বনির্ণয় অপেক্ষ ক্ষুধানিবৃত্তির শ্রেষ্ঠত সবেগে সপ্রমাণ করিতে লাগিল । ষ্টীমার চরে ঠেকিয়া গেলে, শূন্তভাণ্ডারপূরণের চেষ্টায় কমলা উমেশকে গ্রামে পাঠাইয়াছিল। স্কুলে থাকিতে জলপানি-স্বরূপে রমেশ কমলাকে যে কয়টি টাকা দিয়াছিল, তাহারই মধ্য হইতে অল্প কিছু বাচিয়াছিল, তাহাই দিয়া কিছু ঘি-ময়দা সংগ্ৰহ হইল। উমেশকে কমলা জিজ্ঞাসা করিল, “উমেশ, তুই কী থাবি বল দেখি ” উমেশ কহিল, “মাঠাকরুন, দয়া কর যদি, গ্রামে গোয়ালার বাড়িতে বড়ো সরেস দই দেখিয়া আসিলাম। কলা তো ঘরেই আছে, আর পয়সা-দুয়েকের চিড়ে-মুড়কি হইলেই পেট ভরিয়া অভ্যাজ ফলার করিয়া লই ।” লুব্ধ বালকের ফলারের উৎসাহে কমলাও উৎসাহিত হইয়া উঠিল ; কহিল, "পয়সা কিছু বাচিয়াছে উমেশ ?” উমেশ কহিল, “কিছু না মা ।” কমলা মুশকিলে পড়িয়া গেল। রমেশের কাছে কেমন করিয়া মুখ ফুটিয়া টাকা চাহিবে, তাই ভাবিতে লাগিল। একটু পরে বলিল, “তোর ভাগ্যে আজ যদি ফলার না’ই জোটে, তবে লুচি আছে- তোর ভাবনা নাই। চল, ময়দা মাখবি চল ।” উমেশ কহিল, “কিন্তু মা, দই যা দেখিয়া আসিলাম সে আর কী বলিব ।” কমলা কহিল, “দেখ, উমেশ, বাৰু যখন খাইতে বসিবেন তখন তুই তোর বাজারের পয়সা চাহিতে আসিস ।” রমেশের আহার কতকটা অগ্রসর হইলে, উমেশ আসিয়া দাড়াইয়া সসংকোচে মাথা চুলকাইতে লাগিল। রমেশ তাহার মুখের দিকে চাহিল। সে অর্ধোক্তিতে কহিল, “মা, বাজারের পয়সা—” তখন রমেশের হঠাৎ চেতনা হইল যে, আহারের আয়োজন করিতে হইলে অর্থের প্রয়োজন হয়, আলাদীনের প্রদীপের অপেক্ষা করিলে চলে না। ব্যস্ত হইয়া কহিল, “কমলা, তোমার কাছে তো টাকা কিছুই নাই। আমাকে মনে করাইয়া দাও নাই কেন ?” কমলা নীরবে অপরাধ স্বীকার করিয়া লইল। আহারাস্তে রমেশ কমলার হাতে একটি ছোটো ক্যাশবাক্স দিয়া কহিল, “এখনকার মতো তোমার ধনরত্ব সব ७हेर्पोरङहे ब्रश्लि।”