পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२8४ রবীন্দ্র-রচনাবলী আর্য চন্দ্রার অবগুষ্ঠিত লজ্জারুণ মুখের দিকে তাকাইলেন না ; তিনি কেবল তাহার নূপুরবেষ্টিত স্বকুমার চরণযুগলের অলক্তরেখাটুকুমাত্র দেখিয়াছিলেন। যথারীতি বিবাহের পরদিনেই মুক্তামালার-ঝালর-দেওয়া পালঙ্কে বধূকে লুইয়া ইন্দ্রজিং স্বদেশের দিকে যাত্রা করিলেন । অশুভগ্রহের কথা স্মরণ করিয়া শঙ্কিতহদয়ে কাঞ্চীরাজ কন্যার মস্তকের উপরে দক্ষিণ হস্ত রাখিয়া আশীৰ্বাদ করিলেন, মাত কন্যার মুখচুম্বন করিয়া অশ্রজল সংবরণ করিতে পারিলেন না দেবমন্দিরে সহস্র গ্রহবিপ্র স্বস্ত্যয়নে নিযুক্ত হইল। কাঞ্চী হইতে মদ্র বহুদূর, প্রায় এক মাসের পথ। দ্বিতীয় রাত্রে যখন বেতসা-নদীর তীরে শিবির রাখিয়া ইন্দ্রজিতের দলবল বিশ্রামের আয়োজন করিতেছে, এমন সময় বনের মধ্যে মশালের আলো দেখা গেল । ব্যাপারখানা কী জানিবার জন্য ইন্দ্রজিং সৈন্য পাঠাইয়া দিলেন । সৈনিক আসিয়া কহিল, ‘কুমার, ইহারাও আর-একটি বিবাহের ষাত্ৰিদল । ইহারাও আমাদের স্বশ্রেণীয় ক্ষত্রিয়, অস্ত্রোদবাহ সমাধা করিয়া বধূকে পতিগৃহে লইয়া চলিয়াছে। পথে নানা বিঘ্নভয় আছে, তাই ইহারা কুমারের শরণ প্রার্থনা করিতেছে ; আদেশ পাইলে কিছুদূর পথ ইহার আমাদের আশ্রয়ে যাত্রা করে।’ কুমার ইন্দ্রজিং কহিলেন, শরণাপন্নকে আশ্রয় দেওয়া আমাদের ধর্ম। যত্ব করিয়া ইহাদিগকে রক্ষা করিবে।’ এইরূপে দুই শিবির একত্র মিলিত হইল । তৃতীয় রাত্রি অমাবস্তা। সম্মুখে ছোটো ছোটো পাহাড়, পশ্চাতে অরণ্য। শ্রাস্ত সৈনিকেরা ঝিল্লীর শব্দে ও অদূরবর্তী ঝর্নার কলধ্বনিতে গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন । এমন সময়ে হঠাৎ কলরবে সকলে জাগিয়া উঠিয়া দেখিল, মন্ত্রশিবিরের ঘোড়াগুলি উন্মত্তের ন্যায় ছুটাছুটি করিতেছে— কে তাহাদের রজ্জ্ব কাটিয়া দিয়াছে— এবং মাঝে মাঝে এক-একটা তাঁবুতে আগুন লাগিয়াছে ও তাহার দীপ্তিতে অমারাত্রি রক্তিমবর্ণ হইয়া উঠিয়াছে। বুঝা গেল, দস্থ্য আক্রমণ করিয়াছে। মারামারি-কাটাকাটি বাধিয়া গেল— অন্ধকারে শত্ৰু-মিত্র ভেদ করা কঠিন ; সমস্ত উচ্ছম্বল হইয়া উঠিল। দস্থ্যর সেই স্বযোগে লুটপাট করিয়া অরণ্যে-পর্বতে অস্তধান করিল।