পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

는 《to রবীন্দ্র-রচনাবলী কমলা তখন নদীর দিকে চাহিয়া ভাবিতে লাগিল ; অনেকক্ষণ পরে কহিল, “আমি জানি না, সে কী করিবে – আমি তো ভাবিয়া উঠিতে পারি না।” রমেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হইয়া রহিল ; কহিল,“চেৎসিং কি সকল কথা চন্দ্রাকে প্রকাশ করিয়া বলিবে ?” কমলা কহিল, “তুমি বেশ যা হোক, না বলিয়া বুঝি সমস্ত গোলমাল করিষ্ঠা রাখিবে ? সে যে বড়ো বিত্র । সমস্ত স্পষ্ট হওয়া চাই তো ।” রমেশ যন্ত্রের মতো কহিল, “তা তো চাই ।” রমেশ কিছুক্ষণ পরে কহিল, “আচ্ছা কমল, যদি—” কমলা। যদি কী ? রমেশ । মনে করে, আমিই যদি সত্য চেংসিং হই, আর তুমি যদি চন্দ্র হও— কমলা বলিয়া উঠিল, “তুমি অমন কথা আমাকে বলিয়ে না ; সত। বলিতেছি, আমার ভালো লাগে না ।” রমেশ । না, তোমাকে বলিতেই হইবে, তাহা হইলে আমারই বা কী কর্তব্য আর তোমারই বা কর্তব্য কী ? কমলা এ কথার কোনো উত্তর না করিয়া চৌকি ছাড়িয়া দ্রুতপদে চলিয়া গেল । দেখিল, উমেশ তাহদের কামরার বাহিরে চুপ করিয়া বসিয়া নদীর দিকে চাহিয়া আছে। জিজ্ঞাসা করিল, “উমেশ, তুই কখনো ভূত দেখিয়াছিস ?” উমেশ কহিল, “দেখিয়াছি মা ।” শুনিয়া কমলা অনতিদূর হইতে একটা বেতের মোড়া টানিয়া আনিয়া বসিল ; কহিল, “কিরকম ভূত দেখিয়াছিলি বল।” কমলা বিরক্ত হইয়া চলিয়া গেলে রমেশ তাহাকে ফিরিয়া ডাকিল না। চন্দ্রখণ্ড তাহার চোখের সম্মুখে ঘন বঁাশবনের অন্তরালে অদৃপ্ত হইয়া গেল । ডেকের উপরকার আলো নিবাইয়া দিয়া তখন সারেং-খালাসিরা জাহাজের নীচের তলায় আহার ও বিশ্রামের চেষ্টায় গেছে। প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণীতে ধাত্রী কেহই ছিল না। তৃতীয় শ্রেণীর অধিকাংশ যাত্রী রন্ধনাদির ব্যবস্থা করিতে জল ভাঙিয়। ডাঙায় নামিয়া গেছে । তীরে তিমিরাচ্ছন্ন ঝোপঝাপ-গাছপালার ফঁাকে ফাকে অদূরবর্তী বাজারের আলো দেখা যাইতেছে। পরিপূর্ণ নদীর খরস্রোত নোঙরের লোহার শিকলে ঝংকার দিয়া চলিয়াছে এবং থাকিয়া থাকিয়া জাহ্নবীর স্ফীত নাড়ির কম্পবেগ ষ্টীমারকে স্পন্দিত করিয়া তুলিতেছে। এই অপরিস্ফুট বিপুলত, এই অন্ধকারের নিবিড়ত, এই অপরিচিত দৃশ্যের প্রকাও