পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি $49 এমন সময় রমেশ এই গোলমালে জাগিয়া উঠিয়া কমলার খবর লইবার জন্ত তাহার দ্বারের সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল। কমলা চকিত হইয়া, আঁচল যথাস্থানে থাকা সত্বেও তাহা আর-একটু টানিয়া আপনাকে যেন বিশেষভাবে আচ্ছাদনের চেষ্টা করিল। রমেশ কহিল, “কমলা, তোমার মুখ-হাত ধোওয়া হইয়াছে ?” এই প্রশ্নে কেন যে কমলার রাগ হইতে পারে, তাহা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলে সে কিছুতেই বলিতে পারিত না । কিন্তু হঠাৎ রাগ হইল। সে অন্য দিকে মুখ করিয়া কেবল মাথা নাড়িল মাত্র। রমেশ কহিল, “বেলা হইলে লোকজন উঠিয়া পড়িবে, এইবেল তৈরি হইয়া व्ण७-ञां ।” - কমলা তাহার কোনো উত্তর না করিয়া একখানি কোচানো শাড়ি গামছা ও একটি জামা চৌকির উপর হইতে তুলিয়া লইয়া দ্রুতপদে রমেশের পাশ দিয়া স্থানের ঘরে চলিয়া গেল । রমেশ যে প্রাতঃকালে উঠিয়া কমলাকে এই যতুটুকু করিতে আসিল ইহা কমলার কাছে কেবল যে অত্যন্ত অনাবশ্যক বোধ হইল তাহা নহে, ইহা যেন তাহাকে অপমান করিল রমেশের আত্মীয়তার সীমা ষে কেবল খানিকটা দূর পর্যন্ত, এক জায়গায় আসিয়া তাহা যে বাধিয়া যায়, ইহা সহসা কমলা অনুভব করিতে পারিয়াছে। শ্বশুরবাড়ির কোনো গুরুজন তাহাকে লজ্জা করিতে শেখায় নাই, মাথায় কোন অবস্থায় ঘোমটার পরিমাণ কতখানি হওয়া উচিত তাহাও তাহার অভ্যস্ত হয় নাই— কিন্তু রমেশ সম্মুখে আসিতেই আজ কেন অকারণে তাহার বুকের ভিতরটা লজ্জায় কুষ্ঠিত হইতে লাগিল । স্নান সারিয়া কমলা যখন তাহার কামরায় আসিয়া বসিল তখন তাহার দিনের কর্ম তাহার সম্মুখবর্তী হইল। কাধের উপর হইতে আঁচলে-বাধা চাবির গোছা লইয়া কাপড়ের পোর্ট ম্যাণ্টে খুলিতেই তাহার মধ্যে ছোটো ক্যাশবাক্সটি নজরে পড়িল । এই ক্যাশবাক্সটি পাইয়া কাল কমলা একটি নূতন গৌরব লাভ করিয়াছিল। তাহার . হাতে একটি স্বাধীন শক্তি আসিয়াছিল। তাই সে বহু যত্ন করিয়া বাক্সটি তাহার কাপড়ের তোরঙ্গের মধ্যে চাবি-বন্ধ করিয়া রাখিয়াছিল। আজ কমলা সে বাক্স হাতে তুলিয়া লইয়া উল্লাসবোধ করিল না। আজ এ বাক্সকে ঠিক নিজের বাক্স মনে হইল ন, ইহা রমেশেরই বাক্স। এ বাক্সের মধ্যে কমলার পূর্ণস্বাধীনতা নাই। স্বতরাং এ টাকার বাক্স কমলার পক্ষে একটা ভারমাত্র ।