পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি t(: কমলা। কেন, উমেশ যে বলে— রমেশ । উমেশ ? উমেশ ব্যক্তিটি কে ?, কমলা। আঃ, ওই-ষে ছেলেটি আমাদের সঙ্গে যাইতেছে, ও নিজে ব্রহ্মদৈত্য দেখিয়াছে । রমেশ । এ-সমস্ত বিষয়ে আমি উমেশের সমকক্ষ নহি, এ কথা আমাকে স্বীকার করিতেই হইবে। ইতিমধ্যে বহুচেষ্টায় খালাসির দল জাহাজ ভাসাইয়া ছাড়িয়া দিয়াছে। অল্প দূর গেছে, এমন সময়ে মাথায় একটা চাঙারি লইয়া একটা লোক তীর দিয়া ছুটিতে ছুটিতে হাত তুলিয়া জাহাজ থামাইবার জন্য অনুনয় করিতে লাগিল। সারেঙ তাহার ব্যাকুলতায় দৃকপাত করিল না। তখন সে লোকটা রমেশের প্রতি লক্ষ করিয়া বাৰু বাবু করিয়া চীৎকার আরম্ভ করিয়া দিল। রমেশ কহিল, “আমাকে লোকটা সুমারের টিকিটবাবু বলিয়া মনে করিয়াছে।” রমেশ তাহাকে দুই হাত ঘুরাইয়া জানাইয়া দিল, স্টীমার থামাইবার ক্ষমতা তাহার নাই । হঠাৎ কমলা বলিয়া উঠিল, “ওই তো উমেশ । না না, ওকে ফেলিয়া যাইয়ে না— কমলা কাতর হইয়া কহিল, "না, তুমি থামাইতে বলো- বলো-না তুমি— ডাঙা তো বেশি দূর নয়।” রমেশ তখন সারেঙকে গিয় স্টীমার থামাইতে অনুরোধ করিল ; সারেঙ কহিল, “বাৰু, কোম্পানির নিয়ম নাই।” কমলা বাহির হইয়া গিয়া কহিল, “উহাকে ফেলিয়া যাইতে পরিবে ন— একটু থামাও । ও আমাদের উমেশ ।” রমেশ তখন নিয়মলঙ্ঘন ও আপত্তিভঞ্জনের সহজ উপায় অবলম্বন করিল। পুরস্কারের আশ্বাসে সারেঙ জাহাজ থামাইয়া উমেশকে তুলিয়া লইয়া তাহার প্রতি বহুতর ভৎসনা প্রয়োগ করিতে লাগিল । সে তাহাতে ভ্ৰক্ষেপমাত্র না করিয়া কমলার . পায়ের কাছে ঝুড়িটা নামাইয়া, যেন কিছুই হয় নাই এমনি ভাবে হাসিতে লাগিল । কমলার তখনো বক্ষের ক্ষোভ দূর হয় নাই। সে কহিল, “হাসছিল যে ! জাহাজ যদি না থামিত তবে তোর কী হইত ?” উমেশ তাহার স্পষ্ট উত্তর না করিয়া ঝুড়িটা উজাড় করিয়া দিল। এক কাদি কাচকল, কয়েক রকম শাক, কুমড়ার ফুল ও বেগুন বাহির হইয়া পড়িল ।