পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি ২৬৭ ওমা, শজনের খাড়া তুই কোথা হইতে যোগাড় করিয়া আনিলি ? এই দেখে দেখে, খুড়োমশায়, টক-পালং যে এই খোট্টার দেশে পাওয়া যায় তাহা তো আমি জানিতাম না !’ ঝুড়ি লইয়া রোজ সকালে এইরূপ একটা কলরব উঠে । যেদিন রমেশ উপস্থিত থাকে সেদিন ইহার মধ্যে একটু বেস্থর লাগে – সে চৌর্য সন্দেহ না করিয়া থাকিতে পারে না । কমলা উত্তেজিত হইয়া বলে, “বাঃ, আমি নিজের হাতে উহাকে পয়সা গনিয়া দিয়াছি।” - রমেশ বলে, “তাহাতে উহার চুরির স্থবিধা ঠিক দ্বিগুণ বাড়িয়া যায়। পয়সাটাও চুরি করে, শাকও চুরি করে।” এই বলিয়া রমেশ উমেশকে ডাকিয়া বলে, “আচ্ছা, হিসাব দে দেখি ।” তাহাতে তাহার এক বারের হিসাবের সঙ্গে আর-এক বারের হিসাব মেলে না। ঠিক দিতে গেলে জমার চেয়ে খরচের অঙ্ক বেশি হইয়া উঠে । ইহাতে উমেশ লেশমাত্র কুষ্ঠিত হয় না। সে বলে, “আমি যদি হিসাব ঠিক রাখিতে পারিব তবে আমার এমন দশা হইবে কেন ? আমি তো গোমস্ত হইতে পারিতাম, কী বলেন দাদাঠাকুর ?” চক্রবর্তী বলেন, “রমেশবাবু, আহারের পর আপনি উহার বিচার করিবেন, তাহা হইলে স্ববিচার করিতে পারিবেন। আপাতত আমি এই ছোড়াটাকে উৎসাহ না দিয়া থাকিতে পারিতেছি না। উমেশ, বাবা, সংগ্রহ করার বিদ্যা কম বিদ্যা নয় ; অল্প লোকেই পারে। চেষ্ট সকলেই করে ; কৃতকার্য কয়জনে হয় ? রমেশবাবু, গুণীর মর্যাদা আমি বুঝি। শজনে-খাড়ার সময় এ নয়, তবু এত ভোরে বিদেশে শজনের খাড়া কয় জন ছেলে যোগাড় করিয়া আনিতে পারে বলুন দেখি। মশায়, সন্দেহ করিতে অনেকেই পারে ; কিন্তু সংগ্ৰহ করিতে হাজারে এক জন পারে।” রমেশ । খুড়ো, এটা ভালো হইতেছে না, উৎসাহ দিয়া অন্তায় করিতেছেন। চক্রবর্তী। ছেলেটার বিস্তে বেশি নেই, যেটাও আছে সেটাও যদি উৎসাহের অভাবে নষ্ট হইয়া যায় তো বড়ো আক্ষেপের বিষয় হইবে— অস্তত যে কয়দিন আমরা স্ট্রীমারে আছি । ওরে উমেশ, কাল কিছু নিমপাতা যোগাড় করিয়া আনিস ; যদি উচ্ছে পাস আরও ভালো হয়— মা, স্বক্তনিটা নিতান্তই চাই। আমাদের আয়ুর্বেদে বলে— থাক, আয়ুর্বেদের কথা থাক, এ দিকে বিলম্ব হইয়া বাইতেছে। উমেশ শাকগুলো বেশ করে ধুয়ে নিয়ে আয়। * রমেশ এইরূপে উমেশকে লইয়া যতই সন্দেহ করে, খিচুখিচ করে, উমেশ ততই যেন কমলার বেশি করিয়া আপনার হইয় উঠে। ইতিমধ্যে চক্রবর্তী