পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি ఇఅవ স্বারের কাছে আসিয়া চক্রবর্তী কহিলেন, “মা লক্ষ্মী, ভয় নাই, ঝড়ের বাপের সাধ্য কী তোমাকে স্পর্শ করে।” ঝড়ের বাপের সাধ্য কতদূর তাহ নিশ্চয় বলা কঠিন, কিন্তু ঝড়ের সাধ্য যে কী তাহা কমলার অগোচর নাই ; সে তাড়াতাড়ি দ্বারের কাছে গিয়া ব্যগ্রস্বরে কহিল, “খুড়োমশায়, তুমি ঘরে আসিয়া বোসে।” চক্রবর্তী সসংকোচে কহিলেন, “তোমাদের যে এখন শোবার সময় হইল মা, আমি এখন—” ঘরে ঢুকিয়া দেখিলেন রমেশ সেখানে নাই ; আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, ‘রমেশবাবু এই ঝড়ে গেলেন কোথায় ? শাক-চুরি তো তাহার অভ্যাস নাই।” “কে ও , খুড়ো নাকি ? এই-যে, আমি পাশের ঘরেই আছি।” পাশের ঘরে চক্রবর্তী উকি মারিয়া দেখিলেন, রমেশ বিছানায় অর্ধশয়ান অবস্থায় আলো জালিয়া বই পড়িতেছে । pi চক্রবর্তী কহিলেন, “বউমা যে একলা ভয়ে সারা হইলেন। আপনার বই তো ঝড়কে ডরায় না, ওটা এখন রাখিয়া দিলে অন্তায় হয় না। আস্থন এ ঘরে।” কমলা একটা দুর্নিবার আবেগবশে আত্মবিশ্বত হইয়া তাড়াতাড়ি চক্রবর্তীর হাত দৃঢ়ভাবে চাপিয়া রুদ্ধকণ্ঠে কহিল, “না, না খুড়োমশায় ! না, না।” ঝড়ের কল্লোলে কমলার এ কথা রমেশের কানে গেল না, কিন্তু চক্রবর্তী বিস্মিত হইয়া ফিরিয়া আসিলেন । রমেশ বই রাখিয়া এ ঘরে উঠিয়া আসিল। জিজ্ঞাসা করিল, “কী চক্রবর্তী-খুড়ে, ব্যাপার কী ? কমলা বুঝি আপনাকে—” কমলা রমেশের মুখের দিকে না চাহিয়া তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিল, “না, না, আমি উহাকে কেবল গল্প বলিবার জন্য ডাকিয়াছিলাম।” কিসের প্রতিবাদে যে কমলা না না? বলিল তাহা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলে সে বলিতে পারিত না । এই না’র অর্থ এই যে, যদি মনে কর আমার ভয় ভাঙাইবার দরকার আছে– না, দরকার নাই। যদি মনে কর আমাকে সঙ্গ দিবার প্রয়োজন— না, প্রয়োজন নাই । পরক্ষণেই কমলা কহিল, “খুড়োমশায়, রাত হইয়া যাইতেছে, আপনি শুইতে যান। একবার উমেশের খবর লইবেন, সে হয়তো ভয় পাইতেছে।” * দরজার কাছ হইতে একটা আওয়াজ আসিল, “মা, আমি কাহাকেও ভয় করি नां ।”