পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি २१¢ কোন দেশে যাইতে হইবে, কাহাকে সঙ্গে লইতে হইবে, এ-সমস্ত মীমাংসার ভার কমলা একলাই লইয়াছে। রমেশের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বন্ধন পূর্বে কমলা নম্রভাবে স্বীকার করিত, হঠাৎ এই শেষ কয়দিনের মধ্যে তাহ যেন সে কাটাইয়া উঠিয়াছে। অতএব উমেশও তাহার ক্ষুদ্র একটি কাপড়ের পুটুলি কক্ষে লইয়া চলিল, এ সম্বন্ধে আঁর অধিক আলোচনা হইল না। শহর এবং সাহেবপাড়ার মাঝামাঝি একটা জায়গায় খুড়োমশায়ের একটি ছোটো বাংলা । তাহার পশ্চাতে আমবাগান, সম্মুখে বাধানে কুপ, সামনের দিকে অনুচ্চ প্রাচীরের বেষ্টন— কুপের সিঞ্চিত জলে কপি-কড়াইণ্ডটির থেত শ্ৰীবৃদ্ধিলাভ করিয়াছে। প্রথম দিনে কমলা ও রমেশ এই বাংলাতে গিয়াই উঠিল। চক্রবর্তী-খুড়ার স্ত্রী হরিভাবিনীর শরীর কাহিল বলিয়া খুড়া লোকসমাজে প্রচার করেন, কিন্তু তাহার দৌর্বল্যের বাহালক্ষণ কিছুই দেখিতে পাওয়া যায় না। র্তাহার বয়স নিতান্ত অল্প নহে, কিন্তু শক্তসমর্থ চেহারা। সামনের কিছু কিছু চুল পাকিয়াছে, কিন্তু কঁাচার অংশই বেশি। র্তাহার সম্বন্ধে জরা যেন কেবলমাত্র ডিক্রি পাইয়াছে, কিন্তু দখল পাইতেছে না। আসল কথা, এই দম্পতিটি যখন তরুণ ছিলেন তখন হরিভাবিনীকে ম্যালেরিয়ায় খুব শক্ত করিয়া ধরে। বায়ুপরিবর্তন ছাড়া আর-কোনো উপায় না দেখিয়া চক্রবর্তী গাজিপুর ইস্কুলের মাস্টারি যোগাড় করিয়া এখানে আসিয়া বাস করেন। স্ত্রী সম্পূর্ণ স্বস্থ হইলেও তাহার স্বাস্থ্যের প্রতি চক্রবর্তীর কিছুমাত্র আস্থা জন্মে নাই । অতিথিদিগকে বাহিরের ঘরে বসাইয়া চক্রবর্তী অন্তঃপুরে প্রবেশ করিয়া ডাকিলেন, “সেজবউ ।” সেজবউ তখন প্রাচীরবেষ্টিত প্রাঙ্গণে রামকৌলিকে দিয়া গম ভাঙাইতেছিলেন এবং ছোটোবড়ো নানাপ্রকার ভাড়ে ও হাড়িতে নানাজাতীয় চাটনি রৌদ্রে সাজাইতেছিলেন। চক্রবর্তী আসিয়াই কহিলেন, “এই বুঝি ! ঠাও পড়িয়াছে— গায়ে একখানা র্যাপার দিতে নাই ?” হরিভাবিনী। তোমার সকল অনাস্থষ্টি । ঠাণ্ডা আবার কোথায়— রৌদ্রে পিঠ পুড়িতেছে। o চক্রবর্তী। সেটাই কি ভালো ? ছায়া জিনিসটা তো দুর্য ল্য নয়। হরিভাবিনী। আচ্ছ, সে হবে, তুমি আসিতে এত দেরি করিলে কেন ?