পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԵՏ রবীন্দ্র-রচনাবলী শোনাইয়া দিলেন — নিশ্চয় জানিতেন, কোন ইঙ্গিতের কী অর্থ, তাহা বুঝিতে শৈলজার বিলম্ব হয় না। স্বানের পর শৈলজা কমলাকে বলিল, “এসো ভাই, তোমার চুল শুকাইয়া দিই।” কমলা কহিল, “কেন, আজ এত তাড়াতাড়ি কিসের ?” শৈলজা। সে কথা পরে হইবে, তোমার চুলটা আগে বাধিয়া দিই – বলিয়া কমলার মাথা লইয়া পড়িল । আজ বিনানির সংখ্যা অনেক বেশি, খোপা একটা বৃহৎ ব্যাপার হইয়া উঠিল। তাহার পরে কাপড় লইয়া উভয়ের মধ্যে একটা বিষম তর্ক বাধিয়া গেল । শৈলজা তাহাকে যে রঙিন কাপড় পরাইতে চায় কমলা তাহা পরিবার কারণ খুজিয়া পাইল না। অবশেষে শৈলজাকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য পরিতে হইল । মধ্যাহ্নে আহারের পর শৈলজা তাহার স্বামীকে কানে-কানে কী একটা বলিয়া ক্ষণকালের জন্য ছুটি লইয়া আসিল । তাহার পরে কমলাকে বাহিরের ঘরে পাঠাইবার জন্য পীড়াপীড়ি পড়িয়া গেল । রমেশের কাছে কমলা ইতিপূর্বে অনেক বার অসংকোচে গিয়াছে। এ সম্বন্ধে সমাজে লজ্জাপ্রকাশের যে কোনো বিধান আছে তাহা জানিবার সে কোনো অবসর পায় নাই। পরিচয়ের আরম্ভেই রমেশ সংকোচ ভাঙিয়া দিয়াছিল। নির্লজ্জতার অপবাদ দিয়া ধিক্কার দিবার সঙ্গিনীও তাহার কাছে কেহ ছিল না। কিন্তু আজ শৈলজার অনুরোধ পালন করা তাহার পক্ষে দুঃসাধ্য হইয়া উঠিল। স্বামীর কাছে শৈলজা যে অধিকারে যায় তাহা সে জানিয়াছে ; কমলা সেই অধিকারের গৌরব যখন অনুভব করিতেছে না তখন দীনভাবে সে আজ কেমন করিয়া যাইবে । কমলাকে যখন কিছুতেই রাজি করা গেল না তখন শৈল মনে করিল, রমেশের পরে সে অভিমান করিয়াছে। অভিমান করিবার কথাই বটে। কয়টা দিন কাটিয়া গেল, অথচ রমেশবাবু কোনো ছুতা করিয়া এক বার দেখাসাক্ষাতের চেষ্টাও করিলেন ब ।। _ বাড়ির গৃহিণী তখন আহারাস্তে ঘরে দুয়ার দিয়া ঘুমাইতেছিলেন। শৈলজ বিপিনকে আসিয়া কহিল, ‘রমেশবাবুকে তুমি আজ কমলার নাম করিয়া বাড়ির মধ্যেই ডাকিয়া আনো । বাবা কিছু মনে করিবেন না, মা কিছু জানিতেই পরিবেন मां |” বিপিনের মতো চুপচাপ মুখচোরা লোকের পক্ষে এরূপ দৌত্য কোনোমতেই