পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२४-8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ঈষত্তপ্ত বাতাসে বাহিরে গাছের পল্লবগুলি যেমন মর্মরশব্দে কাপিয়া উঠিতেছিল, কমলার বুকের ভিতরেও মাঝে মাঝে তেমনি একটা দীর্ঘনিশ্বাসের হাওয়া উঠিয়া অব্যক্ত বেদনায় একটি অপরূপ স্পন্দনের সঞ্চার করিতেছিল। এমন সময়ে রমেশ ঘরে প্রবেশ করিয়া যখন তাহার পশ্চাং হইতে ডাকিল— ‘কমলা, তখন সে চকিত হইয়া উঠিয়া পড়িল ; তাহার হৃৎপিণ্ডের মধ্যে রক্ত তরঙ্গিত হইতে লাগিল, যে কমলা ইতিপূর্বে কখনো রমেশের কাছে বিশেষ লজ্জা অনুভব করে নাই সে আজ ভালো করিয়া মুখ তুলিয়া চাহিতে পারিল না। তাহার কর্ণমূল আরক্তিম হইয়া উঠিল। இ. আজিকার সাজসজ্জায় ও ভাবে-আভাসে রমেশ কমলাকে নূতন মূর্তিতে দেখিল । হঠাৎ কমলার এই বিকাশ তাহাকে আশ্চর্ষ এবং অভিভূত করিল। সে আস্তে আস্তে কমলার কাছে আসিয়া ক্ষণকালের জন্য চুপ করিয়া দাড়াইয়া মৃদুস্বরে কহিল, “কমলা, তুমি আমাকে ডাকিয়াছ ?” কমলা চমকিয়া উঠিয়া অনাবশ্বক উত্তেজনার সহিত বলিয়া উঠিল, “না না না, আমি ডাকি নাই— আমি কেন ডাকিতে যাইব ?” রমেশ কহিল, “ডাকিলেই বা দোষ কী কমলা ?” কমলা দ্বিগুণ প্রবলতার সহিত বলিল, “না, আমি ডাকি নাই ।” রমেশ কহিল, “ত, বেশ কথা। তুমি না ডাকিতেই আমি আসিয়াছি। তাই বলিয়াই কি অনাদরে ফিরিয়া যাইতে হইবে ?” কমলা। তুমি এখানে আসিয়াছ, সকলে জানিতে পারিলে রাগ করিবেন– তুমি যাও । আমি তোমাকে ডাকি নাই। রমেশ কমলার হাত চাপিয়া ধরিয়া কহিল, “আচ্ছ, তুমি আমার ঘরে এসো— সেখানে বাহিরের লোক কেহ নাই ।” কমলা কম্পিতকলেবরে তাড়াতাড়ি রমেশের হাত ছাড়াইয়া লইয়া পাশের ঘরে গিয়া দ্বার রুদ্ধ করিল। রমেশ বুঝিল, এ-সমস্তই বাড়ির কোনো মেয়ের ষড়যন্ত্ৰ— এই বুঝিয়া পুলকিতদেহে বাহিরের ঘরে গেল। চিত হইয়া পড়িয়া আর-একবার ‘পায়োনিয়র’টা টানিয়া লইয়া তাহার বিজ্ঞাপনশ্রেণীর উপরে চোখ বুলাইতে লাগিল, কিন্তু কিছুই অর্থগ্রহ হইল না। তাহার হৃদয়াকাশে নানারঙের ভাবের মেঘ উড়ো-বাতাসে ভাসিয়া বেড়াইতে লাগিল । শৈল রুদ্ধঘরে ঘা দিল ; কেহ দরজা খুলিল না। তখন সে দরজার খড়খড়ি খুলির বাহির হইতে হাত গলাইয়া দিয়া ছিটকিনি খুলিয়া ফেলিল। ঘরে ঢুকিয়া