পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি ミbd দেখে, কমলা মেজের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া দুই হাতের ভিতর মুখ লুকাইয়া কাদিতেছে। শৈল আশ্চর্ষ হইয়া গেল। এমনি কী ঘটনা ঘটিতে পারে যাহার জন্ত কমল৷ এত আঘাত পায় ! তাড়াতাড়ি তাহার পাশে বসিয়া তাহার কানের কাছে মুখ রাখিয়া স্নিগ্ধস্বরে বলিতে লাগিল, “কেন ভাই, তোমার কী হইয়াছে, তুমি কেন কাদিতেছ ?” \ কমলা কহিল, “তুমি কেন উহাকে ডাকিয়া আনিলে ? তোমার ভারি অন্তায় ।” কমলার এই-সকল আকস্মিক আবেগের প্রবলতা তাহার নিজের পক্ষে এবং অন্যের পক্ষে বোঝা ভারি শক্ত । ইহার মধ্যে যে তাহার কত দিনের গুপ্তবেদনার সঞ্চয় আছে তাহা কেহই জানে না। কমলা আজ একটা কল্পনালোক অধিকার করিয়া বেশ গুছাইয়া বসিয়া ছিল । রমেশ যদি বেশ সহজে তাহার মধ্যে প্রবেশ করিত তবে স্বশ্বেরই হইত। কিন্তু তাহাকে ডাকিয়া আনিয়া সমস্ত ছারখার করিয়া ফেলা হইল। কমলাকে ছুটির সময়ে ইস্কুলে বন্দী করিয়া রাখিবার চেষ্টা, স্ট্রীমারে রমেশের ঔদাসীন্ত, এ-সমস্তই মনের তলদেশে আলোড়িত হইয়া উঠিল । কাছে পাইলেই যে পাওয়া হইল, ডাকিয়া আনিলেই যে আসা হইল, তাহা নহে– আসল জিনিসটি ষে কী তাহা গাজিপুরে আসার পরে কমলা অতি অল্প দিনেই যেন স্পষ্ট বুঝিতে পারিয়াছে। কিন্তু শৈলর পক্ষে এ-সব কথা বোঝা শক্ত । কমলা এবং রমেশের মাঝখানে যে কোনো প্রকারের সত্যকার ব্যবধান থাকিতে পারে তাহা সে কল্পনাও করিতে পারে না। সে বছষত্নে কমলার মাথা নিজের কোলের উপর তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “আচ্ছ। ভাই, রমেশবাবু কি তোমাকে কোনো কঠিন কথা বলিয়াছেন ? হয়তো ইনি তাহাকে ডাকিতে গিয়াছিলেন বলিয়া তিনি রাগ করিয়াছেন। তুমি বলিলে না কেন যে, এ-সমস্ত আমার কাজ ।” কমলা কছিল, “না না, তিনি কিছুই বলেন নাই। কিন্তু কেন তুমি উহাকে ডাকিয়া জানিলে ?” শৈল ক্ষুণ্ণ হইয়া বলিল, “আচ্ছা ভাই, দোষ হইয়াছে, মাপ করো।” poকমলা তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসিয়া শৈলর গলা জড়াইয়া ধরিল ; কহিল, “ৰাও ভাই, যাও তুমি, বিপিনবাবু রাগ করিতেছেন।” বাহিরে নির্জন ঘরে রমেশ ‘পায়োনিয়র’এর উপর অনেকক্ষণ বৃথা চোখ বুলাইয়া এক সময় সবলে সেটা ছুড়িয়া ফেলিয়া দিল। তার পর উঠিয়া বসিয়া কহিল, না আর