পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী واbrج না। কালই কলিকাতায় গিয়া প্রস্তুত হইয়া আসিব । কমলাকে আমার স্ত্রী বলিয়া গ্রহণ করিতে যতদিন বিলম্ব হইতেছে ততই আমার অন্যায় বাড়িতেছে।’ রমেশের কর্তব্যবুদ্ধি হঠাৎ আজ পূর্ণভাবে জাগ্রত হইয়া সমস্ত দ্বিধা-সংশয় একলম্ফে অতিক্রম করিল। NONO রমেশ ঠিক করিয়াছিল কলিকাতায় সে কেবল কাজ সারিয়া চলিয়া আসিবে, কলুটোলার সে গলির ধার দিয়াও যাইবে না। রমেশ দরজিপাড়ার বাসায় আসিয়া উঠিল। দিনের মধ্যে অতি অল্প সময়ই কাজকর্মে কাটে, বাকি সময়টা ফুরাইতে চায় না। রমেশ কলিকাতায় যে দলের সহিত মিশিত, এবারে আসিয়া তাহদের সহিত দেখা করিতে পারিল না। পাছে পথে কাহারও সহিত দৈবাং দেখা হইয়া পড়ে, এই ভয়ে সে যথাসাধ্য সাবধানে থাকিত । কিন্তু রমেশ কলিকাতায় আসিতেই একটা পরিবর্তন অনুভব করিল। যে নির্জন অবকাশের মাঝখানে, যে নির্মল শাস্তির পরিবেষ্টনে, কমলা তাহার নবকৈশোরের প্রথম আবির্ভাব লইয়া রমেশের কাছে রমণীয় হইয়া দেখা দিয়াছিল কলিকাতায় তাহার মোহ অনেকট ছুটিয়া গেল। দরজিপাড়ার বাসায় রমেশ কমলাকে কল্পনাক্ষেত্রে আনিয়া ভালোবাসার মুগ্ধনেত্ৰে দেখিবার চেষ্টা করিল, কিন্তু এখানে তাহার মন কোনোমতে সাড়া দিল না ; আজ কমলা তাহার কাছে অপরিণত অশিক্ষিত বালিকার রূপে প্রতিভাত হইল । জোর যতই অতিরিক্তমাত্রায় প্রয়োগ করা যায় জোর ততই কমিয়া আসিতে থাকে। হেমনলিনীকে কোনোমতেই মনের মধ্যে আমল দিবে না, এই পণ করিতে করিতেই অহোরাত্র হেমনলিনীর কথা রমেশের মনে জাগরূক থাকে। ভুলিবার কঠিন সংকল্পই স্মরণে রাখিবার প্রবল সহায় হইয়া উঠিল। রমেশের যদি কিছুমাত্র তাড়া থাকিত তবে বহু পূর্বেই কলিকাতার কাজ শেষ করিয়া সে ফিরিতে পারিত। কিন্তু সামান্ত কাজ গড়াইতে গড়াইতে বাড়িয়া চলিল । অবশেষে তাহাও নিঃশেষিত হইয়া গেল । কাল রমেশ প্রথমে কার্যান্থরোধে এলাহাবাদে যাত্রা করিয়া সেখান হইতে গাজিপুরে ফিরিবে। এত দিন সে ধৈর্যরক্ষা করিয়া আসিয়াছে, কিন্তু সে ধৈর্ষের