পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯৩ রবীন্দ্র-রচনাবলী তুমি মনে করিতেছ, রমেশবাবুকে আর কখনো তুমি মাপ করিবে না— তাই না ? আচ্ছা, সত্যি বলে ।” কমলা কহিল, “হা, সত্যিই বলিতেছি।” শৈল কমলার গালে করতলের আঘাত করিয়া কহিল, “ইস্ ! তাই বৈকি ! দেখা যাইবে । আচ্ছা, বাজি রাখো ।” কমলার সঙ্গে কথাবার্তা হইবার পরেই শৈল এলাহাবাদে তাহার বাপকে চিঠি পাঠাইল । তাহাতে লিখিল, “কমল রমেশবাবুর কোনো চিঠিপত্র না পাইয়া অত্যন্ত চিন্তিত আছে। একে বেচারা নূতন বিদেশে আসিয়াছে, তাহার পরে রমেশবাবু ষখন-তখন তাহাকে ফেলিয়া চলিয়া যাইতেছেন এবং চিঠিপত্র লিখিতেছেন না, ইহাতে তাহার কী কষ্ট হইতেছে একবার ভাবিয়া দেখো দেখি । র্তাহার এলাহাবাদের কাজ কি আর শেষ হইবে না নাকি ? কাজ তো ঢের লোকের থাকে, কিন্তু তাই বলিয়া দুই ছত্র চিঠি লিখিবার কি অবসর পাওয়া যায় না ?” খুড়া রমেশের সঙ্গে দেখা করিয়া তাহার কন্যার পত্রের অংশবিশেষ শুনাইয়া ভৎসনা করিলেন । কমলার দিকে রমেশের মন যথেষ্ট পরিমাণে আকৃষ্ট হইয়াছে এ কথা সত্য, কিন্তু আকৃষ্ট হইয়াছে বলিয়াই তাহার দ্বিধা আরও বাড়িয়া উঠিল । এই দ্বিধার মধ্যে পড়িয় রমেশ কোনোমতেই এলাহাবাদ হইতে ফিরিতে পারিতেছিল না । ইতিমধ্যে খুড়ার কাছ হইতে শৈলর চিঠি শুনিল । চিঠি হইতে বেশ বুঝিতে পারিল, কমল রমেশের জন্য বিশেষ উদ্‌বেগ প্রকাশ করিতেছে— সে কেবল নিজে লজ্জায় লিখিতে পারে নাই । ইহাতে রমেশের দ্বিধার দুই শাখা দেখিতে দেখিতে একটাতে আসিয়া মিলিয়া গেল। এখন তো কেবলমাত্র রমেশের মুখদুঃখ লইয়া কথা নয়, কমলাও যে রমেশকে ভালোবাসিয়াছে। বিধাতা যে কেবল নদীর চরের উপরে তাহাদের দুই জনকে মিলাইয়া দিয়াছেন তাহা নহে, হৃদয়ের মধ্যেও এক করিয়াছেন। এই ভাবিয়া রমেশ আর বিলম্বমাত্র না করিয়া কমলাকে এক চিঠি লিখিয়া বসিল । লিখিল— প্রিয়তমাস্ক— কমলা, তোমাকে এই-যে সম্ভাষণ করিলাম, ইহাকে চিঠি লিখিবার একটা প্রচলিত পদ্ধতিপালন বলিয়া গণ্য করিয়ে না। যদি তোমাকে আজ পৃথিবীতে সকলের চেয়ে প্রিয় বলিয়া না জানিতাম তবে কখনোই