পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sふb- রবীন্দ্র-রচনাবলী লেখে তখন সে চিঠিতে সব কথা ঠিক করিয়া লেখা চলে না ; তোমাতে আমাতে যেদিন মন-জানাজানির বাকি থাকিবে না সেইদিনই চিঠির মতো চিঠি লিখিতে পারিব। সামনা-সামনি দুই দরজা খোলা থাকিলে তখনি ঘরে অবাধে হাওয়া খেলে। কমলা, প্রিয়তমা, তোমার হৃদয় কবে সম্পূর্ণ উদ্‌ঘাটন করিতে পারিব ? এ-সব কথার মীমাংসা ধীরে ধীরে, ক্রমে ক্রমে হইবে ; ব্যস্ত হইয়া ফল নাই। যেদিন আমার চিঠি পাইবে তাহার পরের দিন সকালবেলাতেই আমি গাজিপুরে পৌছিব। তোমার কাছে আমার অনুরোধ এই, গাজিপুরে পৌছিয়া আমাদের বাসাতেই যেন তোমাকে দেখিতে পাই। অনেক দিন গৃহহারার মতে কাটিল— আর আমার ধৈর্য নাই— এবারে গৃহের মধ্যে প্রবেশ করিব, হৃদয়লক্ষ্মীকে গৃহলক্ষ্মীর মূর্তিতে দেখিব। সেই মুহূর্তে দ্বিতীয়বার আমাদের শুভদৃষ্টি হইবে। মনে আছে– আমাদের প্রথমবার সেই শুভদৃষ্টি ? সেই জ্যোৎস্বারাত্রে, সেই নদীর ধারে, জনশূন্ত বালুমরুর মধ্যে ? সেখানে ছাদ ছিল না, প্রাচীর ছিল না, পিতামাতাভাত-আত্মীয়প্রতিবেশীর সম্বন্ধ ছিল না— সে যে গৃহের একেবারে বাহির। সে যেন স্বপ্ন, সে যেন কিছুই সত্য নহে। সেইজন্য আর-একদিন স্নিগ্ধনির্মল প্রাতঃকালের আলোকে, গৃহের মধ্যে, সত্যের মধ্যে, সেই শুভদৃষ্টিকে সম্পূর্ণ করিয়া লইবার অপেক্ষ আছে। পুণ্যপৌষের প্রাতঃকালে আমাদের গৃহদ্বারে তোমার সরল সহান্ত মূর্তিখানি চিরজীবনের মতো আমার হৃদয়ের মধ্যে অঙ্কিত করিয়া লইব, এইজন্য আমি আগ্রহে পরিপূর্ণ হইয়া আছি । প্রিয়তমে, আমি তোমার হৃদয়ের দ্বারে অতিথি, আমাকে ফিরাইয়ো না।— প্রসাদভিক্ষু রমেশ । & & NH4 শৈল স্নান কমলাকে একটুখানি উৎসাহিত করিয়া তুলিবার জন্য কহিল, “আজি তোমাদের বাংলায় যাইবে না ?” কমলা কহিল, “না, আর দরকার নাই।” শৈল । তোমার ঘর-সাজানো শেষ হইয়া গেল ? কমলা। ই ভাই, শেষ হইয়া গেছে।