পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\రీS রবীন্দ্র-রচনাবলী যোগেন্দ্ৰ কহিল, “বাবা, আজই বলিবার উপযুক্ত সময়। সে তোমার আদেশের জন্য অপেক্ষা করিয়া বসিয়া আছে। আজই যা হয় একটা শেষ করিয়া ফেলো ।” অন্নদা বসিয়া ভাবিতে লাগিলেন। ষোগেন্দ্ৰ কহিল, “বাবা, তুমি ভাবিলে চলিবে না, হেমের কাছে একবার চলো ।” অন্নদা কহিলেন, “যোগেন, তুমি থাকে, আমি একলা তাহার কাছে যাইব ।” যোগেন্দ্ৰ কহিল, “আচ্ছা, আমি এইখানেই বসিয়া রহিলাম।” 壘 অন্নদা বসিবার ঘরে ঢুকিয়া দেখিলেন, ঘর অন্ধকার। তাড়াতাড়ি একটা কোঁচের উপর হইতে কে এক জন ধড়ফড়, করিয়া উঠিয়া দাড়াইল— এবং পরক্ষণেই একটি অশ্রু-আর্দ্র কণ্ঠ কহিল, “বাবা, আলো নিবিয়া গেছে— বেহারাকে জালিতে বলি।” আলো নিবিবার কারণ অন্নদা ঠিক বুঝিতে পারিলেন ; তিনি বলিলেন, “থাক্‌-না মা, আলোর দরকার কী ? বলিয়া হাংড়াইয়া হেমনলিনীর কাছে আসিয়া বসিলেন । হেম কহিল, “বাবা, তোমার শরীরের তুমি যত্ন করিতেছ না।” অন্নদা কহিলেন, “তাহার বিশেষ কারণ আছে মা, শরীরটা বেশ ভালো আছে বলিয়াই যত্ন করি না। তোমার শরীরটার দিকে তুমি একটু তাকাইয়ো হেম।” হেমনলিনী ক্ষুন্ন হইয়া বলিয়া উঠিল, “তোমরা সকলেই ওই একই কথা বলিতেছ— ভারি অন্যায় বাবা । আমি তো বেশ সহজ মাতুষেরই মতো আছি— শরীরের অষত্ব করিতে আমাকে কী দেখিলে বলে তো । যদি তোমাদের মনে হয় শরীরের জন্য আমার কিছু করা আবশ্বক, আমাকে বলো না কেন ? আমি কি কখনো তোমার কোনো কথায় না? বলিয়াছি বাবা ” শেষের দিকে কণ্ঠস্বরটা দ্বিগুণ আৰ্দ্ৰ শুনাইল । অন্নদা ব্যস্ত ও ব্যাকুল হইয়া কহিলেন, "কখনো না মা । তোমাকে কখনো কিছু বলিতেও হয় নাই ; তুমি আমার মা কিনা, তাই তুমি আমার অস্তরের কথা জান— তুমি আমার ইচ্ছা বুঝিয়া কাজ করিয়াছ। আমার একান্ত মনের আশীৰ্বাদ যদি ব্যর্থ না হয়, তবে ঈশ্বর তোমাকে চিরস্থধিনী করবেন।” হেম কহিল, “বাবা, আমাকে কি তোমার কাছে রাখিবে না ?” অন্নদা। কেন রাখিব না ? হেম । যতদিন না দাদার বউ আসে অস্তত ততদিন তো থাকিতে পারি। আমি না থাকিলে তোমাকে কে দেখিবে ? অন্নদা। আমাকে দেখা ! ও কথা বলিস নে মা । আমাকে দেখিবার জন্য তোদের লাগিয়া থাকিতে হইবে, আমার সে মূল্য নাই। হেম কহিল, “বাবা, ঘর বড়ো অন্ধকার, আলো আনি।” বলিয়া পাশের ঘর হইতে