পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি 帕 ჯ)ა© যোগেন্দ্ৰ কহিল, “বাবা, রৌদ্র তো পালাইতেছে না, এত তাড়াতাড়ি কেন ? হেম, অক্ষয়কে এক পেয়ালা চা ঢালিয়া দাও । আমারও চায়ের দরকার আছে, কিন্তু অতিথি আগে ।” .می অক্ষয় হাসিয়া হেমনলিনীকে কহিল, “কর্তব্যের খাতিরে এতবড়ো আত্মত্যাগ দেখিয়াছেন ? দ্বিতীয় সার ফিলিপ-সিড নি।” হেমনলিনী অক্ষয়ের কথায় লেশমাত্র অবধান প্রকাশ না করিয়া দুই পেয়ালা চা প্রস্তুত করিয়া এক পেয়ালা যোগেন্দ্রকে দিল ও অপর পেয়ালাটি অক্ষয়ের অভিমুখে ঈষং একটু ঠেলিয়া দিয়া অন্নদাবাবুর মুখের দিকে তাকাইল। অন্নদাবাবু কহিলেন, “রৌদ্র বাড়িয়া উঠিলে কষ্ট হইবে, চলে, এইবেলা চলো ।” যোগেন্দ্র কহিল, “আজ কাপড় রৌদ্রে দেওয়া থাকৃ-না। অক্ষয় আসিয়াছে—” অন্নদা হঠাৎ উদ্দীপ্ত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “তোমাদের কেবলই জবৰ্দস্তি । তোমরা কেবল জেদ করিয়া অন্য লোকের মর্মাস্তিক বেদনার উপর দিয়া নিজের ইচ্ছাকে জারি করিতে চাও। আমি অনেক দিন নীরবে সহ করিয়াছি, কিন্তু আর এরূপ চলিবে না। মা হেম, কাল হইতে উপরে আমার ঘরে তোতে-আমাতে চা খাইব ।” এই বলিয়া হেমকে লইয়া অন্নদা চলিয়া যাইবার উপক্রম করিলে হেম শাস্তস্বরে কহিল, “বাবা, আর একটু বোসে । আজ তোমার ভালো করিয়া চা খাওয়া হইল না । অক্ষয়বাবু, কাগজে-মোড়া এই রহস্যটি কী জিজ্ঞাসা করিতে পারি কি ?” অক্ষয় কহিল, “শুধু জিজ্ঞাসা কেন, এ রহস্য উদ্‌ঘাটন করিতেও পারেন।” এই বলিয়া মোড়কটি হেমনলিনীর দিকে অগ্রসর করিয়া দিল । হেম খুলিয়া দেখিল, একখানি মরক্কো-বাধানে টেনিসন। হঠাৎ চমকিয়া উঠিয় তাহার মুখ পাণ্ডুবর্ণ হইয়া উঠিল। ঠিক এই টেনিসন, এইরূপ বাধানে, সে পূর্বে উপহার পাইয়াছে এবং সেই বইখানি আজও তাহার শোবার ঘরের দেরাজের মধ্যে গোপন সমাদরে রক্ষিত আছে । যোগেন্দ্র ঈষৎ হাসিয়া কহিল, “রহস্য এখনো সম্পূর্ণ উদঘাটিত হয় নাই।” এই বলিয়া বইয়ের প্রথম শূন্য পাতাটি খুলিয়া তাহার হাতে তুলিয়া দিল। সেই পাতায় লেখা আছে : শ্ৰীমতী হেমনলিনীর প্রতি অক্ষয়শ্রদ্ধার উপহার। তৎক্ষণাং বইখান হেমের হাত হইতে একেবারে ভূতলে পড়িয়া গেল— এবং তৎপ্রতি সে লক্ষমাত্র না করিয়া কহিল, "বাবা, চলো ।” উভয়ে ঘর হইতে বাহির হইয়া চলিয়া গেল। যোগেজের চোখদুটা আগুনের