পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি \ר צס সেই বক্তৃতায় হেমনলিনীকে লইয়া যাও। লোকটার বলিবার ক্ষমতা আছে। স্ত্রীলোকের চিত্ত-অাকর্ষণের পক্ষে ওই ক্ষমতাটা অকিঞ্চিৎকর নয়। হায়, অবোধ অবলারা এ কথা বোঝে না যে, বক্তা স্বামীর চেয়ে শ্রোতা স্বামী ঢের ভালো । যোগেন্দ্র । কিন্তু নলিনাক্ষের ইতিহাসটা কী ভালো করিয়া বলে দেখি, শোনা যাক । অক্ষয় । দেখো যোগেন, ইতিহাসে যদি কিছু খুত থাকে তাহা লইয়া বেশি ব্যস্ত হইয়ে না। অল্প একটুখানি খুতে দুর্লভ জিনিস স্কলভ হয়, আমি তো সেটাকে লাভ মনে করি । অক্ষয় নলিনাক্ষের ইতিহাস যাহা বলিল, তাহ সংক্ষেপে এই— নলিনাক্ষের পিতা রাজবল্লভ ফরিদপুর-অঞ্চলের একটি ছোটোখাটো জমিদার ছিলেন । র্তাহার বছর-ত্রিশ বয়সে তিনি ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন । কিন্তু তাহার স্ত্রী কোনোমতেই স্বামীর ধর্ম গ্রহণ করিলেন না এবং আচার বিচার সম্বন্ধে তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সহিত স্বামীর সঙ্গে স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করিয়া চলিতে লাগিলেন— বলা বাহুল্য, ইহা রাজবল্লভের পক্ষে সুখকর হয় নাই। র্তাহার ছেলে নলিনাক্ষ ধর্মপ্রচারের উৎসাহে ও বক্তৃতাশক্তিদ্বারা উপযুক্ত বয়সে ব্রাহ্মসমাজে প্রতিষ্ঠালাভ করেন। তিনি সরকারি ডাক্তারের কাজে বাংলার নানা স্থানে অবস্থিতি করিয়া চরিত্রের নির্মলতা, চিকিৎসার নৈপুণ্য ও সংকর্মের উদযোগে সর্বত্র খ্যাতি বিস্তার করিতে থাকেন। ইতিমধ্যে একটি অভাবনীয় ব্যাপার ঘটিল। বৃদ্ধ বয়সে রাজবল্লভ একটি বিধবাকে বিবাহ করিবার জন্য হঠাৎ উন্মত্ত হইয়া উঠিলেন। কেহই তাহাকে নিরস্ত করিতে পারিল না। রাজবল্লভ বলিতে লাগিলেন, “আমার বর্তমান স্ত্রী আমার যথার্থ সহধর্মিণী নহে ; যাহার সঙ্গে ধর্মে মতে ব্যবহারে ও হৃদয়ে মিল হইয়াছে তাহাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ না করিলে অন্যায় হইবে।” এই বলিয়া রাজবল্লভ সর্বসাধারণের ধিক্কারের মধ্যে সেই বিধবাকে অগত্যা হিন্দুমতানুসারে বিবাহ করিলেন। ইহার পরে নলিনাক্ষের মা গৃহত্যাগ করিয়া কাশী যাইতে প্রবৃত্ত হইলে নলিনাক্ষ রংপুরের ডাক্তারি ছাড়িয়া আসিয়া কহিল, “মা, আমিও তোমার সঙ্গে কাশী क्षींश्व ।।” মা কাদিয়া কহিলেন, "বাছা, আমার সঙ্গে তোজের তো কিছুই মেলে না, কেন মিছামিছি কষ্ট পাইবি ?” নলিনাক্ষ কহিল, “তোমার সঙ্গে আমার কিছুই অমিল হইবে না।”