পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\లిన న রবীন্দ্র-রচনাবলী ভাঙাইতে পারিবে না। যখন বক্তৃত চলিতেছিল তখন তুমি কি হেমের মুখ লক্ষ্য করিয়া দেখ নাই ?” যোগেন্দ্র। দেখিয়াছি বৈকি। ভালো লাগিতেছিল তাহ বেশ বুঝা গেল । কিন্তু বক্তৃতা ভালো লাগিলেই যে বক্তাকে বরমাল্য দেওয়া সহজ হয়, তাহার কোনো হেতু দেখি না । অক্ষয়। ওই বক্তৃতা কি আমাদের মতে কাহারও মুখে শুনিলে ভালো লাগিত ? তুমি জান না যোগেন্দ্র, তপস্বীর উপর মেয়েদের একটা বিশেষ টান আছে। সন্ন্যাসীর জন্য উমা তপস্যা করিয়াছিলেন, কালিদাস তাহা কাব্যে লিথিয়া গেছেন। আমি তোমাকে বলিতেছি, আর যে-কোনো পাত্ৰ তুমি খাড়া করিবে হেমনলিনী রমেশের সঙ্গে মনে মনে তাহার তুলনা করিবে ; সে তুলনায় কেহ টিকিতে পারিবে না। নলিনাক্ষ মানুষটি সাধারণ লোকের মতোই নয় ; ইহার সঙ্গে তুলনার কথা মনেই উদয় হইবে না। অন্য কোনো যুবককে হেমনলিনীর সম্মুখে আনিলেই তোমাদের উদ্দেশ্য সে স্পষ্ট বুঝিতে পারিবে এবং তাহার সমস্ত হৃদয় বিদ্রোহী হইয়া উঠিবে। কিন্তু নলিনাক্ষকে বেশ একটু কৌশল করিয়া যদি এথানে আনিতে পার তাহা হইলে হেমের মনে কোনো সন্দেহ উঠিবে না ; তাহার পরে ক্রমে শ্রদ্ধা হইতে মাল্যদান পর্যস্ত কোনোপ্রকারে চালনা করিয়া লইয়া যাওয়া নিতান্ত শক্ত হইবে না । যোগেন্দ্র। কৌশলটা আমার দ্বারা ভালো ঘটিয়া ওঠে না--- বলটাই আমার পক্ষে সহজ । কিন্তু যাই বল পাত্রটি আমার পছন্দ হইতেছে না । অক্ষয়। দেখো যোগেন, তুমি নিজের জেদ লইয়া সমস্ত মাটি করিয়ো না। সকল সুবিধা একত্রে পাওয়া যায় না। যেমন করিয়া হোক, রমেশের চিস্তা হেমনলিনীর মন হইতে না তাড়াইতে পারিলে আমি তো ভালো বুঝি না। তুমি যে গায়ের জোরে সেটা করিয়া উঠিতে পারিবে, তাহা মনেও করিয়ো না । আমার পরামর্শ অনুসারে যদি ঠিকমত চল তাহা হইলে তোমাদের একটা সদ্‌গতি হইতেও পারে । 呼 যোগেন্দ্র। আসল কথা, নলিনাক্ষ আমার পক্ষে একটু বেশি দুর্বোধ। এরকম লোকদের লইয়া কারবার করিতে আমি ভয় করি। একটা দায় হইতে উদ্ধার হইতে গিয়া ফের আর-একটা দায়ের মধ্যে জড়াইয়া পড়িব । 邨 অক্ষয়। ভাই, তোমরা নিজের দোষে পুড়িয়াছ, আজকে সি দুরে মেঘ দেখিয়া আতঙ্ক লাগিতেছে । রমেশ সম্বন্ধে তোমরা যে গোড়াগুড়ি একেবারে অন্ধ ছিলে । এমন ছেলে আর হয় না, ছলনা কাহাকে বলে রমেশ তাহ জানে না, দর্শনশাস্ত্রে