পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি "HIV যোগেন্দ্র। এবারে রীতিমত তপস্তা আরম্ভ হইল বুঝি ! চায়ের পাতার মধ্যে বুঝি আধ্যাত্মিক তেজ যথেষ্ট নাই, যা-কিছু অাছে, সমস্তই হরতুকির মধ্যে ? কী বিপদেই পড়া গেল ! হেম, ও-সমস্ত রাখিয়া দাও । এক পেয়ালা চা খাইলেই যদি তোমার যোগ-যাগ ভাঙিয়া যায়, তবে যাক-না— এ সংসারে খুব মজবুত জিনিসও টেকে না, অমন পলকা ব্যাপার লইয়া পাচ জনের মধ্যে চলা অসম্ভব । এই বলিয়া যোগেন্দ্র উঠিয়া স্বহস্তে আর-এক পেয়ালা চা তৈরি করিয়া হেমনলিনীর সম্মুখে রাখিল। সে তাহাতে হস্তক্ষেপ না করিয়া অন্নদাবাবুকে কহিল, “বাবা, আজ যে তুমি শুধু চা খাইলে ? আর কিছু থাইবে না ?” অন্নদাবাবুর কণ্ঠস্বর এবং হাত কঁাপিতে লাগিল, “মা, আমি সত্য বলিতেছি, এ টেবিলে কিছু থাইতে আমার মুখে রোচে না । ষোগেনের কথাগুলো আমি অনেক ক্ষণ পর্যন্ত নীরবে সহ করিতে চেষ্টা করিতেছি । জানি আমার শরীর-মনের এ অবস্থায় কথা বলিতে গেলেই আমি কী বলিতে কী বলিয়া ফেলি— শেষকালে অসুতাপ করিতে হইবে।” হেমনলিনী তাহার পিতার চেয়ারের পাশে আসিয়া দাড়াইয়া কহিল, “বাবা, তুমি রাগ করিয়ো না । দাদা আমাকে চা খাওয়াইতে চান, সে তো ভালোই ; আমি তো কিছু তাহাতে মনে করি নাই। না বাবা, তোমাকে খাইতে হইবে— খালি-পেটে চা থাইলে তোমার অস্থখ করে আমি জানি।” এই বলিয়া হেম আহার্যের পাত্র তাহার বাপের সম্মুখে টানিয়া আনিল । অন্নদা ধীরে ধীরে থাইতে লাগিলেন। হেমনলিনী নিজের চৌকিতে ফিরিয়া আসিয়া যোগেন্দ্রের প্রস্তুত চায়ের পেয়াল হইতে চা থাইতে উদ্যত হইল। অক্ষয় তাড়াতাড়ি উঠিয়া কহিল, “মাপ করিবেন, ও পেয়ালাটি আমাকে দিতে হইবে, আমার পেয়াল ফুরাইয়া গেছে।” যোগেন্দ্র উঠিয়া আসিয়৷ হেমনলিনীর হাত হইতে পেয়ালা টানিয়া লইল এবং অন্নদাকে কহিল, “আমার অন্যায় হইয়াছে, আমাকে মাপ করে ।” অন্নদা তাহার কোনো উত্তর করিতে পারিলেন না, দেখিতে দেপিতে উহার দুই চোখ দিয়া জল গড়াইয়া পড়িল । যোগেজ অক্ষয়কে লইয়া আন্তে আস্তে ঘর হইতে সরিয়া গেল। অন্নদাবাৰু আহার করিয়া উঠিয়া হেমনলিনীর হাত ধরিয়া কম্পমান চরণে উপরের ঘরে গেলেন । সেই রাত্রেই অন্নদাবাবুর শূলবেদনার মতো হইল। ডাক্তার আসিয়া পরীক্ষা করিয়া