পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি Vog S তখন উমেশ আর থাকিতে পারিল না— “মা, মা গো” বলিয়া চীৎকার করিয়া জলের মধ্যে বাপ দিয়া পড়িলু। জল সেখানে অধিক ছিল না ; উমেশ বারংবার পাগলের মতে ডুব দিয়া তলা হাংড়াইয়া বেড়াইতে লাগিল, জল ঘোলা করিয়া তুলিল। । রমেশ হতবুদ্ধির মতো দাড়াইয়া রহিল। বিপিন কহিল, “উমেশ, তুই কী করিতেছিস ? উঠিয়া আয় ।” ஆம் উমেশ মুখ দিয়া জল ফেলিতে ফেলিতে বলিতে লাগিল, “আমি উঠিব না, আমি উঠিব না। মা গো, তুমি আমাকে ফেলিয়া যাইতে পরিবে না।” বিপিন ভীত হইয়া উঠিল। কিন্তু উমেশ জলের মাছের মতো সীতার দিতে পারে, তাহার পক্ষে জলে আত্মহত্যা করা অত্যন্ত কঠিন । সে অনেকটা হাপাইয়াঝণপাইয়া শ্রান্ত হইয়া ভাঙায় উঠিয়া পড়িল এবং বালুর উপরে লুটাইয়া পড়িয়া কাদিতে লাগিল । বিপিন নিস্তন্ধ রমেশকে স্পর্শ করিয়া কহিল, “রমেশবাবু, চলুন। এখানে দাড়াইয়া থাকিয়া কী হইবে । একবার পুলিসকে খবর দেওয়া যাক, তাহারা সমস্ত সন্ধান করিয়া দেখুক ।” শৈলজার ঘরে সেদিন আহারনিদ্রা বন্ধ হইয়া কাল্লার রোল উঠিল। নদীতে জেলের নৌকা লইয়া অনেক দূর পর্যন্ত জাল টানিয়া বেড়াইল। পুলিস চারিদিকে সন্ধান করিতে লাগিল। স্টেশনে গিয়া বিশেষে করিয়া খবর লইল, কমলার সহিত বর্ণনায় মেলে এমন কোনো বাঙালির মেয়ে রাত্রে রেলগাড়িতে ওঠে নাই । সেই দিনই বিকালে খুড়া আসিয়া পৌছিলেন। কয়দিন হইতে কমলার ব্যবহার ও আদ্যোপাস্ত সমুদয় বৃত্তান্ত শুনিয়া তাহার সন্দেহমাত্র রহিল না যে, কমলা গঙ্গার জলে ডুবিয়া আত্মহত্যা করিয়া মরিয়াছে। লছমনিয়া কহিল, “সেইজন্যই খুকী কাল রাত্রে অকারণে কান্না জুড়িয়া এমন একটা অদ্ভূত কাও করিল, উহাকে ভালো করিয়া ঝাড়াইয়া লণ্ডয়া দরকার।” রমেশের বুকের ভিতরটা যেন শুকাইয়া গেল ; তাহার মধ্যে অশ্রুর বাস্পটুকুও ছিল না । সে বসিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিল— ‘এক দিন এই কমলা এই গঙ্গার জল হইতে উঠিয়া আমার পাশে আসিয়াছিল, আবার পূজার পবিত্র ফুলটুকুর মতো আর-এক দিন এই গঙ্গার জলের মধ্যেই অস্তৰ্হিত হইল।” * •স্বর্য যখন অস্ত গেল তখন রমেশ আবার সেই গঙ্গার ধারে আসিল ; যেখানে চাবির গোছা পড়িয়া ছিল সেখানে দাড়াইয়৷ সেই পায়ের চিহ্ন ক'টি একদৃষ্টে দেখিল ; ●闘Rや