পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি e8= উঠিতে যাইতেছেন, তাহাকে অক্ষয় জিজ্ঞাসা করিল, “মশায়, রমেশচন্দ্র চৌধুরী বলিয়া একটি নূতন বাঙালি উকিল গাজিপুরে আসিয়াছেন, তাহার বাসা কোথায় জানেন ?” অক্ষয় ইহার কাছ হইতে খবর পাইল যে, রমেশ তো এতদিন খুড়ামশায়ের বাড়িতেই ছিল, এখন সে সেখানে আছে কি কোথাও গেছে তাহা বলা যায় না । তাহার স্ত্রীকে পাওয়া যাইতেছে না, সম্ভবত তিনি জলে ডুবিয়া মরিয়াছেন। অক্ষয় খুড়ার বাড়িতে যাত্রা করিল। পথে যাইতে যাইতে ভাবিতে লাগিল, এইবার রমেশের চালটা বুঝা যাইতেছে। স্ত্রী মারা গিয়াছে ; এখন সে অসংকোচে হেমনলিনীর কাছে প্রমাণ করিবার চেষ্টা করিবে, তাহার স্ত্রী কোনোকালেই ছিল না । হেমনলিনীর অবস্থা স্বেরূপ, তাহাতে রমেশের কথা অবিশ্বাস করা তাহার পক্ষে অসম্ভব হইবে । যাহারা ধর্মনীতি লইয়া অত্যন্ত বাড়াবাড়ি করিয়া বেড়ায়, গোপনে তাহারা যে কী ভয়ানক লোক অক্ষয় তাহা মনে মনে আলোচনা করিয়া নিজের প্রতি শ্রদ্ধা অতুভব করিতে লাগিল । খুড়ার কাছে গিয়া তাহাকে রমেশের ও কমলার কথা জিজ্ঞাসা করিবামাত্র তিনি শোক সংবরণ করিতে পারিলেন না, তাহার চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল । তিনি কহিলেন, “আপনি যখন রমেশবাবুর বিশেষ বন্ধু, তখন আমার মা কমলাকে নিশ্চয় আপনি আত্মীয়ের মতোই জানেন ; কিন্তু আমি এ কথা বলিতেছি, কয়েক দিন মাত্র র্তাহাকে দেখিয়া আমি আমার নিজের কন্যার সহিত র্তাহার প্রভেদ ভুলিয়া গেছি। দু দিনের জন্ত মায়া বাড়াইয়া মা-লক্ষ্মী যে আমাকে এমন বজ্ৰাঘাত করিয়া ত্যাগ করিয়া যাইবেন, এ কি আমি জানিতাম।” অক্ষয় মুখ মান করিয়া কহিল, "এমন ঘটনাটা ষে কী করিয়া ঘটিল, আমি তো কিছুই বুঝিতে পারি না। নিশ্চয়ই রমেশ কমলার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে নাই।” খুড়া। আপনি রাগ করিবেন না, আপনাদের রমেশটিকে আমি আজ পর্যন্ত চিনিতে পারিলাম না। এ দিকে বাহিরে তো দিব্য লোকটি ; কিন্তু মনের মধ্যে কী ভাবেন, কী করেন, বুঝিবার জো নাই। নহিলে কমলার মতো আমন স্ত্রীকে কী মনে করিয়া যে অনাদর করিতেন তাহা ভাবিয়া পাওয়া যায় না । কমলা এমন সতীলক্ষ্মী, আমার মেয়ের সঙ্গে তার আপন বোনের মতো ভাব হইয়াছিল— তবু কখনো এক দিনের জন্তও নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে একটি কথাও কহে নাই। আমার মেয়ে মাঝে মাঝে বুঝিতে পারিত যে, সে মনের মধ্যে খুবই কষ্ট পাইতেছে, কিন্তু শেষ দিন পর্যন্ত একটি কথা বলাইতে পারে নাই। এমন স্ত্রী ষে কী অসন্ধ