পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি ●●う কয়েক দিন অশ্রাস্তযত্নে হেম উtহার সেবা করার পর ক্ষেমংকরীর সংকটের অবস্থা কাটিয়া গেল। কিন্তু তখনে তাহার অতিশয় দুর্বল অবস্থা। শুচিতা লইয়া অত্যন্ত বিচার করাতে পথ্যজল প্রভৃতি সম্বন্ধে হেমনলিনীর সাহায্য র্তাহার কোনো কাজে লাগিল না। ইতিপূর্বে তিনি স্বপাক আহার করিতেন, এখন নলিনাক্ষ স্বয়ং উপহার পথ্য প্রস্তুত করিয়া দিতে লাগিল এবং আহায় সম্বন্ধে মাতার সমস্ত সেবা নলিনাক্ষকে স্বহস্তে করিতে হইত। ইহাতে ক্ষেমংকরী সর্বদা আক্ষেপ করিয়া বলিতে লাগিলেন, “আমি তো গেলেই হ’ত, কেবল তোদের কষ্ট দিবার জন্যই আবার বিশ্বেশ্বর আমাকে বঁাচাইলেন।” f ক্ষেমংকরী নিজের সম্বন্ধে কঠোরতা অবলম্বন করিয়াছিলেন, কিন্তু র্তাহার চারি দিকে পারিপাট্য ও সৌন্দর্যবিন্যাসের প্রতি উtহার অত্যন্ত দৃষ্টি ছিল। হেমনলিনী সে কথা নলিনাক্ষের কাছ হইতে শুনিয়াছিল। এইজন্য সে বিশেষ যত্বে চারি দিক পরিপাটি করিয়া এবং ঘর-দুয়ার সাজাইয়া রাথিত এবং নিজেও যত্ব করিয়া সাজিয়া ক্ষেমংকরীর কাছে আসিত। অন্নদা ক্যান্টনমেন্টে ষে বাগান ভাড়া করিয়াছিলেন সেখান হইতে প্রত্যহ ফুল তুলিয়া আনিয়া দিতেন, হেমনলিনী ক্ষেমংকরীর রোগশয্যার কাছে সেই ফুলগুলি নানা রকম করিয়া সাজাইয়া রাথিত । নলিনাক্ষ মাতার সেবার জন্য দাসী রাখিতে অনেক বার চেষ্টা করিয়াছিল, কিন্তু তাহাদের হস্ত হইতে সেবা গ্রহণ করিতে কোনোমতেই তাহার অভিরুচি হইত না । অবগু, জল তোলা প্রভৃতির জন্য চাকর-চাকরানি ছিল বটে, কিন্তু তাহার একান্ত নিজের কাজগুলিতে বেতনভুক্‌ কোনো চাকরের হস্তক্ষেপ তিনি সহ করিতে পারিতেন না । ষে হরির মা ছেলেবেলায় তাহাকে মানুষ করিয়াছিল সে মারা গিয়া অবধি অতি বড়ে রোগের সময়েও কোনো দাসীকে তিনি পাখা করিতে বা গায়ে হাত বুলাইতে দেন নাই। সুন্দর ছেলে, স্বন্দর মুখ তিনি বড়ো ভালোবাসিতেন। দশাশ্বমেধঘাটে প্রাতঃস্নান সারিয়া পথে প্রত্যেক শিবলিঙ্গে ফুল ও গঙ্গাজল দিয়া বাড়ি ফিরিবার সময় এক-এক দিন কোথা হইতে হয়তো একটি স্বন্দর খোট্টার ছেলেকে অথবা কোনো ফুটফুটে হিন্দুস্থানি ব্রাহ্মণকস্তাকে বাড়িতে আনিয়া উপস্থিত করিতেন। পাড়ার ছুটি-একটি সুন্দর ছেলেকে তিনি খেলনা দিয়া, পয়সা দিয়া, খাবার দিয়া বশ করিয়াছিলেন ; তাহারা যখন-তখন তাহার বাড়ির যেখানে-সেখানে উপজব করিয়া খেলিয়া বেড়াইত, ইহাতে তিনি বড়ো আনন্দ পাইতেন। তাহার আর-একটি বাতিক ছিল। ছোটোখাটো কোনো একটি স্বন্দর জিনিস দেখিলেই তিনি না কিনিয়া