পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లి&3 w রবীন্দ্র-রচনাবলী থাকিতে পারিতেন না। এ-সমস্ত র্তাহার নিজের কোনো কাজেই লাগিত না ; কিন্তু কোন জিনিসটি কে পাইলে খুশি হইবে, তাহা মনে করিয়া উপহার পাঠাইতে তাহার বিশেষ আনন্দ ছিল। অনেক সময় তাহার দূর আত্মীয়-পরিচিতেরাও এইরূপ একটা-কোনো জিনিস ডাক-যোগে পাইয়া আশ্চর্য হইয়া ষাইত। তাহার একটি বড়ো আবলুস কাঠের কালো সিন্দুকের মধ্যে এইরূপ অনাবশ্বক সুন্দর শৌখিন জিনিস-পত্র, রেশমের কাপড়-চোপড় অনেক সঞ্চিত ছিল । তিনি মনে মনে ঠিক করিয়া রাখিয়াছিলেন, নলিনের বউ যখন আসিবে তখন এগুলি সমস্ত তাহারই হইবে । নলিনের একটি পরমান্বন্দরী বালিকাবধূ তিনি মনে মনে কল্পনা করিয়া রাখিয়াছিলেন– সে র্তাহার ঘর উজ্জল করিয়া থেলিয়া বেড়াইতেছে, তাহাকে তিনি সাজাইতেছেনপরাইতেছেন, এই মুখচিন্তায় তাহার অনেক দিনের অনেক অবসর কাটিয়াছে। তিনি নিজে তপস্বিনীর মতো ছিলেন ; স্নানাহ্নিক-পূজায় প্রায় দিন কাটিয়া গেলে এক বেলা ফল দুধ মিষ্ট খাইয়া থাকিতেন ; কিন্তু নিয়মসংযমে নলিনাক্ষের এতটা নিষ্ঠা র্তাহার ঠিক মনের মধ্যে ভালো লাগিত না । তিনি বলিতেন, ‘পুরুষমানুষের আবার অত আচার-বিচারের বাড়াবাড়ি কেন । পুরুষমানুষদিগকে তিনি বৃহংবালকদের মতো মনে করিতেন ; খাওয়াদাওয়া-চালচলনে উহাদের পরিমাণবোধ বা কর্তব্যবোধ না থাকিলে সেটা যেন তিনি সস্নেহ প্রশ্ৰয়ৰুদ্ধির সহিত সংগত মনে করিতেন, ক্ষমার সহিত বলিতেন, ‘পুরুষমানুষ কঠোরতা করিতে পরিবে কেন ? অবশু, ধর্ম সকলকেই রক্ষা করিতে হইবে, কিন্তু আচার পুরুষমানুষের জন্য নহে, ইহাই তিনি মনে মনে ঠিক করিয়াছিলেন। নলিনাক্ষ যদি অন্যান্য সাধারণ পুরুষের মতো কিঞ্চিং পরিমাণে অবিবেচক ও স্বেচ্ছাচারী হইত, সতর্কতার মধ্যে কেবলমাত্র তাহার পূজার ঘরে প্রবেশ এবং অসময়ে তাহাকে স্পর্শ করাটুকু বাচাইয়া চলিত, তাহা হইলে তিনি খুশিই হইতেন। . ব্যামো হইতে যখন সারিয়া উঠিলেন ক্ষেমংকরী দেখিলেন, হেমনলিনী নলিনাক্ষের উপদেশ-অমুসারে নানাপ্রকার নিয়মপালনে প্রবৃত্ত হইয়াছে, এমন-কি, বৃদ্ধ অন্নদাবাবুও নলিনাক্ষের সকল কথা প্রবীণ গুরুবাক্যের মতো বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভক্তির সহিত অবধান করিয়া শুনিতেছেন । ইহাতে ক্ষেমংকরীর অত্যন্ত কৌতুক বোধ হইল। তিনি এক দিন হেমনলিনীকে ডাকিয়া হাসিয়া কহিলেন, “মা, তোমরা দেখিতেছি, নলিনকে আরও খ্যাপাইয়া তুলিবে। ওর ও সমস্ত পাগলামির কথা তোমরা শোন কেন ? তোমরা সাজগোজ করিয়া, হাসিয়া-খেলিয়া আমোদ-আহ্লাদে বেড়াইবে ; তোমাদের কি