পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি Wog a দিকে চাহিয়া ভাবিতে লাগিলেন । হেমনলিনী আসিয়া স্নিগ্ধস্বরে কহিল, “বাবা, এখানে বড়ো ঠাণ্ডা, শুইতে চলো।” o, অন্নদা কহিলেন, “তুমি শুইতে যাও, আমি একটু পরেই বাইতেছি।” হেমনলিনী চুপ করিয়া তাহার পাশে দাড়াইয়া রহিল। আবার খানিক বাদেই কহিল, “বাবা, তোমার ঠাণ্ডা লাগিতেছে, নাহয় বসিবার ঘরেই চলে৷ ” তখন অন্নদাবাবু চৌকি ছাড়িয়া, উঠিয়া, কিছু না বলিয়া শুইতে গেলেন। পাছে তাহার কর্তব্যের ক্ষতি হয় বলিয়া হেমনলিনী রমেশের কথা মনে মনে আন্দোলন করিয়া নিজেকে পীড়িত হইতে দেয় না। এজন্য এ-পর্যন্ত সে নিজের সঙ্গে অনেক লড়াই করিয়া আসিতেছে। কিন্তু বাহির হইতে যখন টান পড়ে তখন ক্ষতস্থানের- সমস্ত বেদন জাগিয়া উঠে । হেমনলিনীর ভবিষ্যৎ জীবনটা যে কী ভাবে চলিবে তাহা এ-পর্যন্ত সে পরিষ্কার কিছুই ভাবিয়া পাইতেছিল না, এই কারণেই একটা স্বৰূঢ় কোনো অবলম্বন খুজিয়া অবশেষে নলিনাক্ষকে গুরু মানিয়া তাহার উপদেশ-অনুসারে চলিতে প্রস্তুত হইয়াছিল। কিন্তু যখনি বিবাহের প্রস্তাবে তাহাকে তাহার হৃদয়ের গভীরতম দেশের আশ্রয়স্বত্র হইতে টানিয়া আনিতে চাহে তখনি সে বুঝিতে পারে, সে বন্ধন কী কঠিন ! তাহাকে কেহ ছিন্ন করিতে আসিলেই হেমনলিনীর সমস্ত মন ব্যাকুল হইয়া সেই বন্ধনকে দ্বিগুণবলে অঁাকড়িয়া ধরিতে চেষ্টা করে । (to এ দিকে ক্ষেমংকরী নলিনাক্ষকে ডাকিয়া কহিলেন, “আমি তোমার পাত্রী ঠিক করিয়াছি।” নলিনাক্ষ একটু হাসিয়া কহিল, “একেবারে ঠিক করিয়া ফেলিয়াছ ?” ক্ষেমংকরী। তা নয় তো কী ? আমি কি চিরকাল বাচিয়া থাকিব ? তা শোনো, আমি হেমনলিনীকেই পছন্দ করিয়াছি— অমন মেয়ে আর পাইব না। রঙটা তেমন ফর্গা নয় বটে, কিন্তু— নলিনাক্ষ। দোহাই মা, আমি রঙ ফর্গার কথা ভাবিতেছি না। কিন্তু হেমনলিনীর সঙ্গে কেমন করিয়া হইবে ? সে কি কখনো হয় ? ক্ষেমংকরী । ও আবার কী কথা। না হইবার তো কোনো কারণ দেখি না । নলিনাক্ষের পক্ষে ইহার জবাব দেওয়া বড়ো মুশকিল। কিন্তু হেমনলিনী— এতদিন ¢१8